বুধবার, ১৭ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

সংযোগ ব্রিটিশের করা রেল রুটে

বাংলাদেশ-ভারতের রেল খাতের যোগাযোগে নতুন দিগন্ত ৬ রুটে

সংযোগ ব্রিটিশের করা রেল রুটে

বাংলাদেশ ও ভারত রেল কানেকটিভিটিতে দুই দেশই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ব্রিটিশ আমলে করা রেল রুটগুলোকে। এদিকে বাংলাদেশ যোগাযোগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে রেলের ছয় রুটকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই সঙ্গে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত নতুন ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানাচ্ছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছয় রেলপথ সংযোগে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এগুলো হচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা, রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ, রাধিকাপুর-বিরল, দর্শনা-গেদে, কুলাউড়া-মহিষাশন, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী এবং বাংলাবান্ধা-শিলিগুড়ি রেলপথ সংযোগ। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় রেল সংযোগ গড়ে তোলার জন্য রেল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, আগরতলা-    আখাউড়া রেলপথ সংযোগের একটি লাকসাম-কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে। আরেকটি রাজধানী ঢাকাকে যুক্ত করবে, যা কমলাপুর আইসিসিডি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে দর্শনা-গেদে হয়ে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ছাড়া আসামের সঙ্গে রেল সংযোগ গড়ে তুলতে কুলাউড়া-মহিষাশন রেলপথ সংযোগটি ব্যবহার করা হবে। এ রুট একদিকে আসামের করিমগঞ্জ পর্যন্ত যাবে, অন্যদিকে আখাউড়া-আগরতলা সংযোগ হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এবং শাহবাজপুর-ঢাকা আইসিসিডি (ধীরাশ্রম)-বঙ্গবন্ধু সেতু-দর্শনা/গেদে হয়ে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। অন্য রুটগুলোর মধ্যে চিলাহাটি হলদিবাড়ী, রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ এবং বাংলাবান্ধা ও শিলিগুড়ি সংযোগ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল কানেকটিভিটি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। জানা গেছে, আগরতলা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত নতুন সংযোগ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ আসাম ও ত্রিপুরার সঙ্গে পশ্চিমবাংলার রাজধানী কলকাতা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি রেল সংযোগ গড়ে উঠবে। জানা গেছে, রেল সংযোগের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রচলিত রেল রুটগুলোকে দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে কানেকটিভিটির উপযোগী করে গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়; যাতে বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ওই যোগাযোগ সম্পর্ক নেপাল ও ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যায়। কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশকে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে সীমান্ত এলাকায় রেল সংযোগের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ রেলপথের সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলোয় সংস্কার কার্যক্রম চলছে। টঙ্গী-ভৈরব বাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ভৈরব সেতু এবং দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এ ছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। ৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করার কাজ সম্পন্ন হবে। এর ফলে ভারত, নেপাল ও ভুটান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলপথ দিয়ে সহজেই তাদের পণ্য পরিবহন করতে পারবে। রেলপথ বিভাগের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে যে চার দেশীয় কানেকটিভিটির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেখানে রেলপথ সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমলের প্রচলিত রেল রুটগুলো দিয়েই কানেকটিভিটি গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগে যে কটি রুট রয়েছে তার মধ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ১৯৬৫ সাল থেকে বন্ধ। আর বেনাপোল-পেট্রাপোল, গেদে-দর্শনা, রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ এবং বিরল-রাধিকাপুর রুট এখনো চালু রয়েছে। তবে ভারতের রেল রুট মিটারগেজ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেল রুট ব্রডগেজ হওয়ায় এসব রুট কানেকটিভিটির উপযোগী করতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমজাদ হোসেন আরও বলেন, বিরল-রাধিকাপুর অংশের রেলপথ ব্রডগেজ থেকে মিটারগেজে রূপান্তরের কাজ চলছে, যা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। এ ছাড়া ভারতীয় অর্থায়নে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি আগরতলা পর্যন্ত রেলপথে পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর