বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

দিনাজপুরে জটিল রাজনীতি

ধান্দাবাজদের দাপট আওয়ামী লীগে

দিনাজপুরে জটিল রাজনীতি

দিনাজপুরের আওয়ামী লীগ এখন ধান্দাবাজ-সুবিধাবাদীদের কব্জায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ অতীতের সরকারগুলোর সঙ্গে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের চরিত্র ও গুণগত কিছু পার্থক্য থাকবে- এটাই আশা করেছিলেন। এই আশা থেকেই তারা দিনাজপুরের ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর স্থানীয় নেতাদের আচার-আচরণ তাদেরকে হতাশ করে চলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপি-জামায়াতের প্রকাশ্য উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় ধান্ধাবাজ চক্র দাপটের সঙ্গে নিজেদের সুবিধা হাতিয়ে চলেছে। অনেকেরই অভিযোগ, দিনাজপুর সদর আসনে গত ৬ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এসব চক্রের কারণে সেসব সাধারণ মানুষের সামনে আসছে না। তাদের সামনে আসছে কেবলই এইসব নেতাদের অপকর্মের বিষয়। একটি সূত্র জানায়, দিনাজপুর-৩ সদর আসনের আওতায় থাকার কারণে জেলার সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান সদর আসন এমপির ওপর নির্ভরশীল। চাকরি থেকে শুরু করে খাস জমি, খাস পুকুর, ভিজিডি ভিজিএফ, সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য সবার যোগাযোগ সদর আসনের এমপির সঙ্গে। এসব ব্যাপারে কেউ আর জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। আর এভাবেই জেলা সংগঠনের নেতারা অনেকটাই গুরুত্বের বাইরে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবলীগ নেতা বলেন, দলের কজন স্বার্থান্বেষী নেতার নানামুখী তৎপরতার জন্য দলীয় আদর্শ মারাত্মকভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, অবক্ষয় ঘটছে দলীয় ভাবমূর্তির। জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে দলের মধ্যেই তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। জানা যায়, অলিখিতভাবে জেলায় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের একদিকে অবস্থান করছেন প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এমপি এবং অপরদিকে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। অনেকেই দোষারোপ করে জানান, এই অবস্থার জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেউ কেউ বলছেন, ১৯৯৬-এর কাউন্সিলে এক ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট এম আবদুর রহিম। ফলাফল ঘোষণার পর পুনরায় গণনা শেষে অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেনকে সভাপতি পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগে চলছে মান-অভিমান, ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং মর্যাদার প্রশ্নে টানাপড়েন। এ কারণে একই মঞ্চে খুব একটা দেখা যায় না গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং জাতীয় সংসদের হুইপ এম ইকবালুর রহিম এমপিকে। জেলা আওয়ামী লীগ চলছে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রীর সমর্থনে। দিনাজপুর সদরে কোতোয়ালি আওয়ামী লীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শহর আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের একাংশ চলছে সদর এমপির সমর্থনে। প্রতিটি সহযোগী সংগঠনেই রয়েছে এর প্রভাব। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল জানান, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং নেই, তবে মতবিরোধ থাকতেই পারে। এতে দিনাজপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান দুর্বল হয়নি। নেতা-কর্মী যে যেখানেই থাকুন না কেন আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত আওয়ামী লীগের দলীয় আদর্শের অগ্র সৈনিক। অন্যায়কারী যেই হোক তার বিপক্ষে আমরা। দিনাজপুর আওয়ামী লীগে কোনো সমস্যা নেই। তিনি দাবি করেন, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, চাঁদাবাজির রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ প্রশ্রয় দেয় না।

সর্বশেষ খবর