বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

গ্রুপিং দ্বন্দ্ব মামলায় দিশাহারা বিএনপি

গ্রুপিং দ্বন্দ্ব মামলায় দিশাহারা বিএনপি

একদিকে দলীয় গ্রুপিং, আরেকদিকে পুলিশের দায়ের করা একাধিক মামলায় দিনাজপুর বিএনপিতে চলছে দিশাহারা অবস্থা। সাংগঠনিকভাবে দলটি একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। জেলা কমিটির শতাধিক নেতা থাকলেও দলীয় সভাগুলোতে উপস্থিতি ঘটছে হাতেগোনা কয়েকজনের। অবস্থা বুঝে তৃণমূলের সংগঠকরাও দলীয় কর্মসূচিতে সারা দিচ্ছেন না।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, দিনাজপুরে বিএনপির দলীয় কোন্দল এতটাই জোড়ালো যে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও দিনাজপুরে পালন করা হচ্ছে পৃথকভাবে। এই গ্রুপিং আর দ্বন্দ্ব নিরসনে এসে কেন্দ্রীয় নেতারাও কয়েকবার লাঞ্ছনার শিকার হয়ে ফিরে গেছেন। এ কারণে অঙ্গসংগঠনগুলোর ওপর মূল দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছিল বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনেও। নেতা-কর্মীদের আক্ষেপ, এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই জেলায় আজ নেতৃত্ব সংকট চরমে। জেলার সীমানা ছাড়িয়ে কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা পর্যায়ে। কাহারোল, বিরল, বোঁচাগঞ্জ, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, চিরিরবন্দর উপজেলাতে রয়েছে বিএনপির একাধিক গ্রুপ। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, গ্রুপিং আর দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে দলের ভবিষ্যৎ পরিণতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে। কর্মীরা জানিয়েছেন, দলের কোন্দল মেটানোর দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেননি। দলের এ অবস্থায় ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে দূরে সরে যাচ্ছেন। অনেকেরই অভিযোগ, বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে সুবিধাবাদী, টেন্ডারবাজসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করা নেতারা ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে কোটিপতি হয়েছেন। তারা এখন দলের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও আন্দোলনে তাদের টিকিটি মিলছে না। এরা এখনো ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্য রেখে ঠিকাদারি থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়ে চলেছেন। অনেকে আবার পুলিশের মামলা থেকে রেহাই পেতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন। উত্তরাঞ্চলে বগুড়ার পর দিনাজপুরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। জেলা বিএনপি শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকলেও তৎকালীন নেত্রী ও সাবেক মন্ত্রী বেগম খুরশীদ জাহান হক মৃত্যুবরণ করার পর দলটির নেতা-নেত্রী, কর্মীরা নানা কোন্দল আর গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। পরে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু গ্রুপিংয়ের কারণে এ কমিটি দলকে চাঙ্গা করতে ব্যর্থ হয়। এরপরেও খুরশীদ জাহান হকের অনুসারী বলে পরিচিত একটি গ্রুপ জেলা বিএনপির বাইরে থেকে যায়। দলীয় আন্দোলন কর্মসূচি পালন হতে থাকে পৃথক পৃথকভাবে। ধারণা পাওয়া গেছে, রাজনীতির মাঠে এখন সক্রিয় রয়েছে তিনটি গ্রুপ। নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনেও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দলীয় কোন্দল সম্পর্কে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক ভাগের, দ্বিতীয় ভাগের নেতৃত্বে আছেন সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার বড় বোন খুরশীদ জাহান হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল দিচ্ছেন অপর এক ভাগের নেতৃত্ব। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দিনাজপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন। বর্তমানে উপজেলা ও পৌরসভা মিলে বিএনপির রয়েছে ২২টি কমিটি। লুৎফর রহমান মিন্টুকে সভাপতি, মুকুর চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ও হাসানুজ্জামান উজ্জ্বলকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। ২০১২ সালে শেষ হয় কমিটির মেয়াদ। তারপর আর জেলা বিএনপির কাউন্সিল হয়নি। শহর কৃষক দলের সভাপতি আলী আকবর বলেন, আমরা চাই শিগগিরই মূল দলের কাউন্সিল হোক। জেলা বিএনপির কাউন্সিল না হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ক্ষাভ ও হতাশা বাড়ছে। এর মধ্যে পুলিশের মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে দল গোছানো তো দূরের কথা, অনেক নেতা-কর্মী প্রকাশ্যেই আসতে পারছেন না। খুরশীদ জাহান হকের অনুসারী যুব নেতা আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বেগম খুরশীদ হকের নেতৃত্বের কারণে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল দিনাজপুর। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগী নেতা দলের বাইরে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়। ফলে সাংগঠনিক ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তারপরও বলব এই মুহূর্তে আমরা কেন্দ্রের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত।’ জেলা বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মন্জুরুল ইসলাম জানান, ৫ জানুয়ারির পর পুলিশের হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতা-কর্মীরা। দলের ইমেজ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে প্রতিটি জেলা নেতাকে নিয়ে বৈঠক করে উজ্জীবিত করা খুব প্রয়োজন। জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু বলেন, পুলিশের মামলায় বিপর্যস্ত দলের অবস্থা। শতাধিক মামলার বোঝা নিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। তিনি দাবি করেন, দলে এখন কোনো গ্রুপিং নেই।

সর্বশেষ খবর