সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

লিবিয়া নিয়ে কূটনৈতিক জটিলতা

দূতাবাসে দুই গ্রুপ, ধীরে চলো নীতিতে ঢাকা

সংঘাতময় পরিস্থিতিতে থাকা লিবিয়া নিয়ে এক ধরনের কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। একদিকে সেখানে চলছে গোলাগুলি। বিদ্যমান রয়েছে দুটি সরকার। এ কারণে সেখানকার কোনো সরকারের কাছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তার পরিচয়পত্র পেশ করতে পারেননি। আবার ঢাকায় থাকা লিবিয়া দূতাবাসের দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি দখলের খেলা। দুই কর্মকর্তা নিজেকে দূতাবাসের চার্জ দ্য আফেয়ার্স দাবি করছেন। একজনের দখলে থাকা দূতাবাস আরেকজন দখল করে নিয়েছেন। পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে রেখেছে ঢাকা। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মেনে চলা হচ্ছে ধীরে চলো নীতি। তবে এই সুযোগে তৎপর হয়েছে ভিসা ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভিসা ইস্যু করে লিবিয়ার মৃত্যুপুরীতে পাঠানো হচ্ছে সাধারণ শ্রমিকদের।
জানা যায়, ঢাকায় লিবিয়ার দূতাবাসে মাহমুদ এম এম সাল্লাবি ও খালেদ মোহাম্মদ আবু সাইদ নামের দুই কর্মকর্তা উভয়ই নিজেকে দূতাবাসের চার্জ দ্য আফেয়ার্স (সিডিএ) দাবি করছেন। এর মধ্যে মাহমুদ এম এম সাল্লাবি এতদিন দূতাবাসের সিডিএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু জুলাইয়ে প্রথম সপ্তাহে ত্রিপোলির পররাষ্ট্র দফতর থেকে তার স্থানে খালেদ মোহাম্মদ আবু সাইদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। সাল্লাবির স্থানে দায়িত্ব পালন শুরু করনে সাইদ। কিন্তু সাল্লাবি সেই নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আবার তার অফিসে কাজ শুরু করেন। খালেদ মোহাম্মদ আবু সাইদ চলে যান দূতাবাসের বাইরে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাইদ অভিযোগ করেন, মাহমুদ এম এম সাল্লাবি বেশকিছু বাংলাদেশিকে সঙ্গে নিয়ে দেয়াল টপকে দূতাবাস দখল করেন। এরপর পুলিশ এলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দূতাবাস ভবনটি এ মুহূর্তে সাল্লাবির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খালেদ দাবি করেন, ত্রিপোলি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২ জুলাই সাল্লাবিকে অপসারণ করে আমাকে নিযুক্ত করে। বিষয়টি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অবশ্য, ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা লিবীয় দূতাবাসের এ ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু পুরো বিষয়টি লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ ইস্যু বিবেচনা করে তারা ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। কারণ, লিবিয়ায় বর্তমানে পাশাপাশি দুটি সরকার দায়িত্ব পালন করছে। সাবেক একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের চার বছর পর বৈধতার দাবিদার দুটি সরকারে বিভক্ত এখন দেশটি। সাবেক বিদ্রোহীদের নিয়ে গঠিত সামরিক বাহিনীর দুটি বিরোধী অংশ দুই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। একে অপরের ওপর বোমাবর্ষণও করছে তারা। গত বছরের আগস্টে রাজধানী ত্রিপোলি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার দেশটির পূর্বাঞ্চলের শহর বেনগাজির ওপর নির্ভর করে সরকার পরিচালনা করছে। ‘লিবিয়া ডন’ নামের সাবেক বিদ্রোহীদের এক জোট বাহিনী ত্রিপোলি দখল করে প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার ও পার্লামেন্ট গঠন করেছে। সে দেশের এ সমস্যা সমাধানের আগে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে না ঢাকা। এ কারণেই দূতাবাস দখলের অভিযোগের বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
তৎপর ভিসা ব্যবসায়ী : লিবিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের বা অন্য কাউকে না যেতে তিন দফায় আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাস। কিন্তু ঢাকাস্থ লিবিয়া দূতাবাস সম্পৃক্ত একটি চক্রের সহায়তায় ভিসা ব্যবসায়ীরা এখনো তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভিসা ইস্যু করে লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। ত্রিপোলি ও বেনগাজির বিভিন্ন স্থানে মুহুর্মুহু গোলাগুলি চললেও ঢাকায় থাকা লিবিয়ার কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সেখানে বাংলাদেশিদের কাজের প্রচুর সুযোগ ও চাহিদা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর