নওগাঁর ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নে বেশকিছু এলাকায় সেচ সংকটে বৃষ্টিনির্ভর ফসল ছাড়া অন্য ফসল ফলানো সম্ভব ছিল না। এতে শত শত বিঘা জমি অনাবাদি ফেলে রাখতে বাধ্য হতো স্থানীয় কৃষকরা। এ অবস্থায় দীর্ঘ জরিপ ও অনুসন্ধানে নামে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। খরাপ্রবণ এসব এলাকার মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বালুর স্তর না থাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যেত না। এ অবস্থায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পাতকুয়া খননের সিদ্ধান্ত নেয়। এসব পাতকুয়া থেকে রশি দিয়ে বালতি ব্যবহার করে পানি তোলা হতো। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সেচ প্রকল্পের অধীনে পাতকুয়ায় সোলার পাম্প বসিয়ে সেখান থেকে পানি উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে পাতকুয়ায় সোলার পাম্প বসিয়ে সেখান থেকে অটোমেটিকভাবে উঠে আসা পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার শুরু হয়। চাষাবাদ হচ্ছে বিভিন্ন শাকসবজি। সরেজমিন দেখা যায়, সোলার প্যানেল পাতকুয়ার ওপর ফানেল আকৃতিতে স্থাপন করা হয়েছে। যেন বৃষ্টির পানি হারভেস্ট করা যায়। স্থাপিত সোলার প্যানেলের ক্ষমতা ৯০০ ওয়াট এবং পাম্পের ক্ষমতা ৫০০ ওয়াট। পাম্পটির হেড ৬০ মিটার এবং পাম্পটির ডিসচার্জ ০.৮০ লিটার। পাতকুয়ার আশপাশের পতিত জমিতে শাকসবজি চাষাবাদের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১ ডায়া ইউপিভিসি পাইপের মাধ্যমে ১৮০০ ফুট ভূগর্ভস্থ পাইপের নালা নির্মাণ করেছে। সেচের জন্য ২১টি ট্যাপ স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গৃহবধূ শ্রীমতি মমতা রানী, রিজনচন্দ্র মণ্ডল ও সুকুমার রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পাতকুয়া আমাদের কাছে স্বপ্ন। যেখানে পানি সংকটের কারণে কোনো প্রকার ফসল হচ্ছিল না। এমনকি বাড়ির সব কাজকর্ম থমকে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে বিনা পয়সায় সম্পূর্ণ অটোমেটিকভাবে পানি দিচ্ছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে শাকসবজি চাষবাবাদ শুরু হয়েছে ওই পানি দিয়ে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ হয়েছে। অবশিষ্ট কৃষকরা চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত শুরু করে দিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষক জহির বলেন, এই পাতকুয়ার পানি ট্যাপের মাধ্যমে তার জমিতে আসায় এবার তিনি ১ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে ঢেঁড়স, পুঁইশাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক ও বেগুনের চাষ করেছেন। দিবর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মণ্ডল বলেন, খরাপ্রবণ এই এলাকায় আরও ৫০-৬০টি পাতকুয়া খনন করে সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচের পানি সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। বিএমডিএর মাধ্যমে সম্পাদন করা সরকারের এই প্রকল্পটি খুবই ভালো এবং কৃষকের জন্য এটা খুবই লাভজনক হবে। এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পত্নীতলা জোনের সহকারী প্রকৌশলী আল মামুনুর রশীদ বলেন, এ ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি সেচের অভাবে পতিত থাকে। তাই যেসব জমিতে সেচের পানি কম লাগে সেসব জমিতে পাতকুয়ার মাধ্যমে শাকসবজি চাষবাদ করা যাবে। এভাবে ১৪-১৫ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। তাই ওই প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সেচবঞ্চিত এই এলাকাকে শাকসবজির ভাণ্ডার হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।