শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঝিমুচ্ছে মানিকগঞ্জের রাজনীতি

আওয়ামী লীগ অসহায় ছাত্রলীগের দাপটে

জেলা ছাত্রলীগের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগ। এদের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মূল দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কিছুই করতে পারছে না। খোদ ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি শাদেকুল ইসলাম সোহা ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক রুবেলের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে না পেরে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত সভানেত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে। জানা গেছে, ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন ২৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। দলীয় সূত্র জানায়, এ অভিযোগ দাখিলের পর থেকে সোহা-রুবেল গ্রুপের সঙ্গে মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এরই জেরে নবগঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেলের নেতৃত্বে মিছিল বের হলে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মিছিল ভণ্ডুল করে দেয়। এ রকম হামলা-পাল্টা হামলা অহরহই ঘটছে। জানা গেছে, ২৪ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের ১৫৪ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হলেও ৩১ জুলাই ওই কমিটি থেকে ৬৭ জন সদস্য পদত্যাগ করেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহা ও সাধারণ সম্পাদক রুবেলের ভাষ্য, ভয়ভীতি দেখিয়ে এসব নেতাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এদিকে, এ বছরের ১৭ জানুয়ারি কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে গোলাম মহীউদ্দীন ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম। তারপর ছয় মাস চলে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। সব উপজেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি না হওয়ায় হতাশায় ত্যাগী নেতারা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন কমিটিবিহীনভাবে চলছে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ। জেলা যুবলীগের সভাপতি সুদেব সাহা জানান, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আট বছরেরও বেশি আগে। তবে এক মাসের মধ্যে কাউন্সিল ও নতুন কমিটি গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার একাধিক বর্ষীয়ান নেতা জানান, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীরা এখন রাজনীতির বদলে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার নিয়ে ব্যস্ত। এতে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়ে চলেছে। কেউ কেউ জানান, আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং জনগণের নজর ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সব দোষ ছাত্রলীগের ওপর চাপাচ্ছেন। ছাত্রলীগের ভুলত্রুটি থাকলে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে বসেই সমস্যার সমাধান করা যেত। কিন্তু তা না করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতাই প্রকাশ করেছেন। নবগঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বিশাল গণতান্ত্রিক দল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতা-কর্মীরা কখনো জনগণের অমঙ্গল করতে পারেন না। দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু লোক দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’ তিনি বলেন, ‘সৎ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ত্যাগী নেতাদের নিয়ে খুব শিগগিরই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জেলা কমিটি গঠন করা হবে।’ ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। পরিবারে কেউ নিয়ম মেনে না চললে পরিবার-প্রধানের কাছে অভিযোগ জানানো হতেই পারে।’

সর্বশেষ খবর