শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

আত্মগোপনে বিএনপি তবুও কলহ

বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীতে বিএনপি অন্তর্কোন্দলে জর্জরিত। দীর্ঘ ছয় বছর জেলা বিএনপির কাউন্সিল না হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনটি। এখানে তাদের ঘায়েল করার জন্য তারাই যথেষ্ট। রটনা আছে, ফেনীতে বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর অনুমতি নিয়েই। বিএনপির মিছিল কখন, কয়টায়, কোন সড়ক হয়ে কোন সড়কে যাবে, তাও ঠিক করে দেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। নির্ধারিত সময়ের আগে-পরে মিছিল করলে মিছিল চলার সময়েই কৈফিয়ত দিতে হয়েছে এমন নজিরও আছে। চলতি বছর বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে তাদের সক্রিয়ভাবে প্রকাশ্যে মাঠে দেখা না গেলেও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে পেট্রলবোমা, ককটেল হামলা ও অগ্নিসংযোগে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। আন্দোলন চলাকালে জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টারসহ সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হওয়ার পর বাকি নেতা-কর্মী আত্মগোপন অবস্থা থেকে আরও গভীর আত্মগোপনে চলে যান।
জেলার শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতার অনেকেই ঝুট-ঝামেলা থেকে নিজেদের আড়ালে রাখতে আন্দোলন চলাকালে স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে ধরা দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এ জেলায় বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের কোনো কার্যালয় পর্যন্ত নেই। জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল অন্তত দুটি ভাগে বিভক্ত। অভিযোগ আছে, জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলীয় নেতা-কর্মী এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ৩১ জুলাই বেগম জিয়ার পক্ষে ফুলগাজীতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে আসেন। এ সংবাদটুকু পর্যন্ত তারা সাংবাদিকদের জানাননি। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা মাঝামাঝি সময় ছুটে যান সংবাদ সংগ্রহ করতে। জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের জানান, ‘মামলা-হামলায় আমরা জর্জরিত। দলের প্রায় ৩৫০ নেতা-কর্মী বর্তমানে জেলে। দলে কোনো কোন্দল নেই।’ সরকারি দলের সঙ্গে দলের কারও আঁতাত আছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার জানান, জেল থেকে বের হওয়ার পর তিনি খুব অসুস্থ। দল সম্পর্কে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে আমি কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছি না।’ জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি প্রবীণ নেতা আবদুর রাজ্জাক জানান, আন্দোলন-সংগ্রাম চলাকালে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা দিয়ে শাসক দল দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবে- এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য এভাবে দলের সবাই গা-ঢাকা দেবে! ২০০৯ সালে বেগম খালেদা জিয়ার ছোটভাই সাঈদ এস্কান্দার জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে নিজে সভাপতি নির্বাচিত হন এবং জিয়া উদ্দিন মিস্টারকে সাধারণ সম্পাদক বানান। সেদিন থেকেই বিএনপি প্রকাশ্যে দুভাগ হয়ে পড়ে। বাকি ভাগের নেতৃত্ব দেন সাবেক সভাপতি ও বেগম জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিন ভিপি। তখন থেকে এস্কান্দারের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বিএনপিকে চালাতে গিয়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থা হয়ে পড়ে অনেকটা স্থবির। পরিণামে বিএনপি প্রকাশ্যে কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়ে। মারপিট ও কোন্দল ছাড়া জেলা বিএনপি কোনো মিছিল-মিটিং তখন কল্পনাও করা যেত না। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এখানে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বেগম জিয়া ফেনী সার্কিট হাউসে অবস্থান কালেও সার্কিট হাউসের সামনে প্রকাশ্যে যুবদলের দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়াও সার্কিট হাউসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সাঈদ এস্কান্দারের মৃত্যুর পর জেলা বিএনপি আরও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সাঈদ এস্কান্দার গ্রুপের নেতৃত্ব পর্দার আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু। এদিকে বিএনপির সাবেক আরেক সভাপতি ও মোশারফ হোসেনের মৃত্যুর পর অনেকটা নিষ্কিয় হয়ে যায় সদরের এমপি জয়নাল আবেদিন ভিপি। দীর্ঘ ছয় বছর জেলা বিএনপির কাউন্সিল না হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়ে পুরো দল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি অনেক ত্যাগী নেতা অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টারের রাজনৈতিক কোনো প্রজ্ঞা নেই। ফেনী পৌরসভা নির্বাচনের দিন সকাল ১০টায় বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিলেও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগকে খুশি রাখতে বেলা ১টায় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। এদিকে অ্যাডভোকেট আবু তাহের ও জিয়া উদ্দিন মিস্টার ৩-৪ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন। জামিন পাওয়ার পর তারা কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না বলে দলীয় কর্মীরা জানান।
এ ছাড়া যুবদল সভাপতি ও জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক গাজী হাবিবুল্লাহ মানিকের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার পাটোয়ারির বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্য। বিএনপির রাজনৈতিক ঘরানায় অনেকটা জনপ্রিয় গাজী হাবিবুল্লাহ মানিক জানান, তার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ মামলা হওয়ায় তিনি একটু আড়ালে গেছেন। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ছাত্রদলের বিগত কয়েকটি জেলা কমিটির মধ্যেই ছিল প্রকাশ্য কোন্দল। কোন্দল নিরসন না করেই কেন্দ্রীয় কমিটি এ বছরই ঘোষণা করে নতুন কমিটি। নতুন কমিটি রেহানা আক্তার রানুর পকেট কমিটি দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা কমর ছাত্রদলের বৃহৎ অপর অংশ। রেহানা আক্তার রানুকে ছাত্রদল বিভক্তির হোতা দাবি করে ছাত্রদলের একপক্ষ প্রকাশ্যে বক্তব্যে জানান ‘ছুদুর বুদুর নেত্রী’ নব্য ঘষেটি বেগম। ছাত্রদল একপক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল-মিটিং করে বিষোদগার করে বেড়াচ্ছে নিয়মিত।

সর্বশেষ খবর