শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

জামায়াত নিষ্ক্রিয় জাপাও নিস্তেজ

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বিচারের প্রতিবাদে ফেনীতে জামায়াত অনেক হিংস্রতা দেখালেও ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদের তেমন ভূমিকা ছিল না। এই আন্দোলনের আগেই তারা চলে গেছে অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ডে। শহরভিত্তিক তারা নিষ্ক্রিয় হলেও জামায়াতের মহিলা কর্মী ও ছাত্রশিবির কর্মীরা গ্রামগঞ্জে মহিলা ও শিশুকে তাদের সংগঠনের আদর্শে আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। দলের জেলা আমির এ কে এম শামসুদ্দিন জানান, তিনি ও শহর আমির মুফতি হান্নানসহ প্রায় ৪০০ নেতা-কর্মী আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতার হন। এখন দাগনভূঞা পৌর আমির সালেহ উদ্দিনসহ ১২ নেতা-কর্মী জেলে আছেন। বাকিরা সবাই জামিনে আছেন। পুলিশি বাধার কারণে তারা কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না বলেও তিনি জানান। এদিকে জামায়াত-শিবির বর্তমানে তাদের কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ-কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের বড় জামে মসজিদ ও জহিরিয়া মসজিদের আশপাশ এলাকা থেকে সুবিধাজনক সময় নামাজের পর হঠাৎ বিক্ষোভ-মিছিল বের করে। ১৫ থেকে ২০ জনের মিছিলটি ১ থেকে ২ মিনিটে ফটোসেশন শেষ করে উধাও হয়ে যায়। বর্তমানে তাদের কর্মসূচি এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। জামায়াতের কয়েক শীর্ষ নেতাসহ কর্মীরা নিজেদের ভাসানী অনুসারী দাবি করে লেবাস পাল্টানোর পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের অনেকেই সরকার দলের লেবাস মিলিয়ে চলছেন বলে জানা যায়।
কাদের মোল্লা ও সাঈদীর বিচারের প্রতিবাদে শিবির ফেনীর প্রধান সড়ক শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক ও কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টানা তিন দিন ব্যারিকেড দিয়ে ও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে শহরবাসীকে জিম্মি করে রেখেছিল। তাণ্ডব থামাতে এক রাতে শহর জামায়াতের বৃহৎ ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান ও জামায়াত কার্যালয়ে আগুন দেয় সরকার সমর্থকরা। জামায়াতকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহর ছাড়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। না হয় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাশ ফেলার ও জামায়াতের সব ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়ো হয়। ফেনী শহরের বড় বড় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো জামায়াতের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সেদিন থেকেই অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির। জাতীয় পার্টি : লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম মন্ত্রী থাকাকালে ফেনীতে প্রতাপশালী ছিল জাতীয় পার্টি। বর্তমানে এখানে তাদের অবস্থান খুবই নাজুক। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন ফেনী পৌরসভার মেয়র হওয়ায় এখানে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব একেবারে হারিয়ে যায়নি। ফেনীতে জাতীয় পার্টি চলে হাজী আলাউদ্দিনের একক নির্দেশে। হাজী আলাউদ্দিন জাতীয় পার্টির নেতা হলেও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রায় প্রতিটি বড় কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন। মূলত ফেনীতে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ‘বি-টিম’। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির রিন্টু আনোয়ারকে মহাজোটের প্রার্থী করা হলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী রহিম উল্যাহর কাছে পরাজিত হন।
জাসদ : ফেনী ১ আসনের সংসদ সদস্য জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরিন আক্তার। ফেনীতে জাসদের কোনো শক্ত অবস্থান না থাকায় শিরিন আক্তারকেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে হয় আওয়ামী লীগের সহযোগিতায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী ফেনীতে জাসদ প্রভাবশালী থাকলেও বর্তমানে তাদের কোনো অবস্থান নেই। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিন (ভিপি জয়নাল) দল বল নিয়ে জাসদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর জাসদের অবস্থান তলানির দিকে চলে যায়। বাকি নেতা-কর্মীদের অধিকাংশ বিভিন্ন সময় যোগ দেন আওয়ামী লীগে। জেলায় তাদের নামকাওয়াস্তে একটি কমিটি আছে।

সর্বশেষ খবর