শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফের জলাবদ্ধতা বন্যা

ফের জলাবদ্ধতা বন্যা

বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের বিভিন্ন গ্রাম এখন প্লাবিত। বাড়ির উঠানে মাছ ধরার এই ছবিটি তোলা হয়েছে গতকাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঢল ও ভারিবর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শত শত গ্রাম ও কয়েক লাখ মানুষ। রংপুরে তিস্তা নদী-তীরবর্তী গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ১১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৯০ হাজার মানুষ। লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে ৬৫টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। দিনাজপুরে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তলিয়ে গেছে খাল-বিল, ডোবা-নালাসহ নিচু এলাকা। হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেনীতে পাহাড়ি ঢল ও ভারিবর্ষণে মুহুরী ও কহুয়া নদীর নয়টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। ফ্লাড ওয়ালের দুটি স্থানের নয় মিটার করে ১৮ মিটার ভেঙে যাওয়ায় ফুলগাজী বাজার প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা প্লাবিত শ্রমজীবী মানুষ। জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-রংপুর : প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদী-তীরবর্তী গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের ১১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৯০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে আমন ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানির তোড়ে কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের বকুলতলা-একতাবাজার সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রংপুর পাউবোর পানি বিজ্ঞান শাখার (হাইড্রোলজি বিভাগ) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ জানান, অবিরাম বর্ষণের পাশাপাশি উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি  পেয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে তিস্তা-তীরবর্তী নোহালী, লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, আলমবিদিতর, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪০ হাজার মানুষ। পানিবন্দী পরিবারগুলোতে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফরহাদ হোসেন জানান, উপজেলায় তিস্তা-তীরবর্তী শহীদবাগ, টেপামধুপুর, হারাগাছ ও বালাপাড়া ইউনিয়নের ২৫ গ্রাম  প্লাবিত হওয়ায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য মাছচাষি। পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌস জাহান জানান, তিস্তা-তীরবর্তী পীরগাছা, তাম্বুলপুর, ছাওলা, কান্দি ও কৈকুড়ি ইউনয়নের ৪০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।  লালমনিরহাট : তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদী-তীরবর্তী এলাকার ৬৫ গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। সানিয়াজান ও রত্নাইসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেতসহ নদী-তীরবর্তী এলাকার ঘর-বাড়ি। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে জেলা শহরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। দিনাজপুর : জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তলিয়ে গেছে খাল-বিল, ডোবা-নালাসহ নিচু এলাকা। বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গতকাল অব্যাহত বৃষ্টির কারণে কাজে যেতে পারেনি শ্রমজীবী মানুষ। দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, মৌসুমী আবহাওয়ার লঘু নিুচাপ প্রবাহিত হওয়ায় গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। হবিগঞ্জ : খোয়াই নদীর বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.৮৫ মিটার। নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, হাওড়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলার অনেক এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফেনী : ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারিবর্ষণে মুহুরী ও কহুয়া নদীর নয়টি স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছে। ফুলগাজী বাজারের ফ্লাড ওয়ালের দুটি স্থানের ১৮ মিটার ভেঙে যাওয়ায় ফুলগাজী বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামাণিক জানান, মুহুরী নদীর পানি গতকাল বিপদসীমার ১৩.৬০ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নীলফামারী : টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে গতকাল তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চল। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্র মতে, দুদিনের টানা ভারিবর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত ও  ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ছোটবড় ১০টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান,  তিস্তার নদীর তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০টি চর গ্রামের নিমঞ্চাল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। জেলার ছয় উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার কমপক্ষে দেড় শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব জেলার নিুআয়ের মানুষ। কুমিল্লা : প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, পানিতে ভেসে গেছে এসব গ্রামের পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আঙিনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রোগী ও স্বজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কুড়িগ্রাম : ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যাপ্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী ৫০টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। প্রবল বর্ষণে জেলা শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর