শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

কক্সবাজারের ঢিলেঢালা রাজনীতি

আওয়ামী লীগ চলছে ১১ বছরের পুরনো কমিটিতে

দীর্ঘ এক যুগ সম্মেলন হয় না জেলা আওয়ামী লীগের। দল চলছে সেই পুরনো কমিটি দিয়ে। তৈরি হয়নি নতুন নেতৃত্ব। জনরব আছে, পুরনো সব অ্যানালগ নেতৃত্ব দিয়েই ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটছে জেলা আওয়ামী লীগ। শীর্ষ নেতাদের অনেকে ছো মেরে কেন্দ্র থেকে কমিটি আনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এমপিরা নেই সাংগঠনিক কাজে। ক্ষমতার প্রভাবে অনেক নেতা আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সড়ক ও জনপথ, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জমি দখলের অভিযোগও উঠেছে সরকারদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও স্নায়ুযুদ্ধ চলছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। নব্বইয়ের দশকের সেই উত্তাল কক্সবাজারের আওয়ামী রাজনীতির অদম্য গণজোয়ারের জলুস আর জেলাবাসীর চোখে পড়ে না। ১১ বছর ধরে আঁকড়ে ধরা চেয়ারে বাসা বেঁধেছে ঘুণ। নেতা-কর্মীর মধ্যে নেই প্রাণচাঞ্চল্য। সবখানে বিরাজ করছে হতাশা ও সাংগঠনিক স্থবিরতা। সর্বোপরি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির আকাশে এখন কালো মেঘের ঘনঘটা। নতুন প্রজন্মের মেধাবীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে জানা-শোনার কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। জেলা আওয়ামী লীগের পরিচিত নেতা-কর্মী ছাড়া অনেকেই দলীয় অফিসই চেনেন না। জাতীয় দিবস বা কোনো কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনা গেলেও ওই অফিসে জেলা আওয়ামী লীগের কোনো উল্লেখযোগ্য নেতাকে চোখে পড়ে না। নেতাদের বাড়িতে আর ব্যক্তিগত চেম্বারেই প্রতিনিয়ত ব্যক্তি রাজনীতির অফিস হিসেবে কাজকর্ম চলছে। জেলা আওয়ামী নেতৃত্বে এমন অবস্থা হলেও থেমে নেই তৃণমূল পর্যায়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ত্যাগী, পরীক্ষিত সৈনিকদের স্বপ্নযাত্রা। প্রয়াত এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরীর মতো জনপ্রিয় নেতা আওয়ামী লীগে এখন নেই। বয়সের ভারে অনেক জনপ্রিয় নেতা মাঠছাড়া। ক্ষমতার লোভে অনেকে পেশিশক্তি ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন শুধু ক্ষমতাসীন রাজনীতির সুবিধা পাওয়ার আশায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলীয় নেতা-কর্মীরা সরকারি দলের রাজনীতিতে থেকেও রাজপথ দখলে রেখেছিলেন। ২০০৮ সালের পর জমি ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, তদবিরবাজ ছাড়া ত্যাগী নেতা-কর্মীদের তেমন একটা দেখা যায় না। তবে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মুজিবুর রহমান পৌর আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে রাখলেও জেলা কমিটিতে থাকা অন্য নেতাদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো নয়। ১১ বছর ধরে নিজেদের পদ না ছাড়ার প্রবণতায় জিম্মি অবস্থায় রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা। এ দুর্বলতার সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগাতে চান প্রতিপক্ষ রাজনীতিকরা। জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা নির্যাতিত ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, তারাই এখন রাজপথ দখলে রেখেছেন। সেদিনকার যারা সুবিধাবাদী শ্রেণি জঙ্গিসংশ্লিষ্ট তথাকথিত বিশিষ্ট নেতারাই আওয়ামী লীগকে স্থবির করে রেখেছেন। এ বিশিষ্ট নেতারাই সম্মেলন হতে দিচ্ছেন না এক যুগ ধরে। দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারিরা যদি পদ না পান তাহলে সংগঠন কোন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে আহমদ হোসেনকে ফোন দিলে তিনি বলেন, জেলা কমিটি গঠন সম্পূর্ণ কেন্দ্রের এখতিয়ার। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর