শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

কোন্দলে জাপা, কোর্ট কাচারিতে জামায়াত

খুবই দুর্দিন যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর। আগে কখনো এ রকম হয়নি। কক্সবাজার জামায়াতের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও এখন অনেক নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে পারছেন না। মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। বিগত সময়গুলোয় জেলায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে শক্তি দেখিয়েছে জামায়াত। বিএনপি ছাড়াই ২০ দলের কর্মসূচি পালন করেছে তারা। অন্যদিকে, জেলা জাতীয় পার্টি কোন্দলে জর্জরিত। বিভিন্ন কমিটি গঠন ও ক্ষমতার লোভ থেকেই এ কোন্দল। জামায়াতের এমন কোনো নেতা নেই, যিনি হামলা-মামলার শিকার হননি। জেল খেটেছেন এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। এখনো অনেক নেতা-কর্মী কারাবন্দী। দলীয় কাজের চেয়েও কোর্ট-কাচারিতে বেশি সময় যাচ্ছে তাদের। এত কিছুর মধ্যেও কৌশলে দলীয় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে জামায়াত। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা সংগঠিত হচ্ছেন। তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের প্রধান দল বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তেমন ভালো নেই জামায়াতের। কক্সবাজারে ২০-দলীয় জোটের কাজ নেই বললেই চলে। ‘বিএনপির সঙ্গে থেকে তারা লাভবান হয়নি, বরং ক্ষতিই হয়েছে বেশি’ এমনটিই ধারণা দলটির তৃণমূলের। এ কারণে ইদানীং অনেকটা ‘একলা চল’ নীতিতে আছে জামায়াত। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে নেমে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াত। বিশেষ করে সাঈদী মুক্তি আন্দোলনে অনেকে লাশ হয়েছেন। বহু নেতা-কর্মী হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। রাজপথে তখন বিএনপির টিকিটিও দেখা যায়নি। সেখানে জেলাব্যাপী একাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় জামায়াত। পুরো জেলায় রয়েছে তাদের শক্ত অবস্থান। দলীয় শক্তিতে ভর করে সরকারের পতন ঘটবে এমন আশায় গুড়েবালি। বহু নেতা-কর্মীর প্রাণ ও বিস্তর অর্থ ব্যয়ে লাভ হয়নি। এখন সরকারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জামায়াত আদর্শিক সংগঠন। তাদের রয়েছে গণতন্ত্রচর্চার সুদীর্ঘ ইতিহাস। মামলা-হামলা ও জেল-জুলুম করে জামায়াতকে দমানো যাবে না। সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকারের ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে দলীয় কর্মীদের মানোন্নয়নে পরিকল্পিত কাজ চলছে।
 

জাতীয় পার্টির অবস্থা : কোন্দলে জর্জরিত কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টি দুই ভাগে চলছে। এর প্রভাব তৃণমূলেও পড়েছে। দ্বিধাবিভক্ত জেলা জাপার একটি নিয়ন্ত্রণ করছে চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য দলের সাবেক জেলা সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ ইলিয়াছ। আরেক অংশ বর্তমান সভাপতি আলহাজ কবির আহমদ সওদাগর নিয়ন্ত্রণ করেন। জেলায় জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে শক্ত না হলেও আওয়ামী লীগের পরশে অটো এমপি হওয়ার সৌভাগ্য কপালে জুটেছে তাদের। ফলে সংরক্ষিত আসনের একজনসহ জেলায় দুজন এমপি রয়েছে জাপার। তবে জেলা কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দুই ভাগ হয়ে গেছে সরকারের প্রধান বিরোধী দল জাপা। বিশেষ করে কক্সবাজার শহরকেন্দ্রিক তাদের বিরোধ চরমে। কমিটি নিয়ে বেশ কয়েকবার ঘটেছে সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা। দলীয় অফিস থাকলেও বসার লোক নেই। দলের জেলা সভাপতি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তাকে কেন্দ্র করে কিছু কর্মসূচি পালিত হলেও তা এখন অনেকটা বন্ধ। সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলা কমিটি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। অনেক নেতা-কর্মী সরকারি-বেসরকারি অফিসে ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে জেলা জাপা খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। এ প্রসঙ্গে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ নেই। অতীতের ভুল বোঝাবুঝি নিরসন হয়ে গেছে। আমরা সুসংগঠিত। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। ৫ জানুয়ারির আগে নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি থাকলেও নির্বাচনের পর উজ্জীবিত নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর