শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

উৎসবে উচ্ছল সেই মণি-মুক্তা

উৎসবে উচ্ছল সেই মণি-মুক্তা

ছয় বছর আগে জোড়া লাগানো অবস্থায় এভাবেই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল দুই বোনকে। চিকিৎসকদের সফল অস্ত্রোপচারে আলাদা করা হয় তাদের। বাবা-মার কোলে গতকাল দুই বোন [উপরে] -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জন্মদিনের উৎসব-আনন্দে সেই মণি-মুক্তা। জোড়া লাগানো এই শিশু দুটিকে ২০১০ সালে জটিল এক অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করেছিলেন চিকিৎসকরা। দেশজুড়ে তখন এ ঘটনা ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি করে। মণি-মুক্তা স্বাভাবিক জীবন পাবে কিনা তা নিয়ে ছিল সংশয়। ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করে মণি-মুক্তা। আজ তাদের ষষ্ঠ জন্মবার্ষিকী।
মণি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল বলেন, ‘আমার স্ত্রী কৃষ্ণা রানী পালের গর্ভে পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগা অবস্থায় ওরা জন্ম নেয়। এ সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদের মুখে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে হতাশার মাঝে দিন-যাপন করতে থাকি। চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্য। একপর্যায়ে রংপুরের চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করার। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে মণি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে শিশু দুটি ভিন্ন সত্ত্বা লাভ করে।’ জয় প্রকাশ আরও বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এবং ডা. এ আর খানের সাফল্যে আমরা মণি-মুক্তাকে স্বাভাবিকভাবে ফিরে পেয়েছি। এখন দুই বোন উচ্ছ্বাস আনন্দে দিন কাটায়।’ আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নয়নের ধারায় এবং চিকিৎসক এ আর খানের সাফল্য বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে সম্ভাবনাময় করেছে। আর এই নতুন ইতিহাস বীরগঞ্জের জোড়া লাগানো যমজ দুই বোন মণি-মুক্তাকে ঘিরে। সেই ইতিহাস ছয় বছর আগের। আজ সেই মণি-মুক্তার ষষ্ঠ জন্ম দিন। গতকাল বিকালে কেক কেটে মণি-মুক্তার ষষ্ঠ জন্মবার্ষিকী পালন করছে পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা। মণি-মুক্তা বর্তমানে সুস্থ এবং ভালো আছে। তারা একে অপরের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটায়। গত বছর তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। এ বছর তারা প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা-মা। ষষ্ঠ জন্মবার্ষিকীতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মণি-মুক্তা দোয়া চেয়ে দেশবাসীকে জন্মদিনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। মণি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রানী পাল বলেন, আমরা সব কষ্ট ভুলে তাদের চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মণি-মুক্তা এবং পরিবারের জন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর