শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

মাশরুমের বীজ সংকট বিপাকে চাষি

মাশরুমের বীজ সংকট বিপাকে চাষি

মাশরুমের বীজ (স্পন) সংকটে বেকার হয়ে পড়েছেন দেশের দুই লক্ষাধিক চাষি। ৫০ লক্ষাধিক ভোক্তা ওষুধ ও তরকারি হিসেবে মাশরুম খান। বীজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারাও মাশরুম পাচ্ছেন না। এ নিয়ে চাষি ও ভোক্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সূত্রমতে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে লোকজন মাশরুম খান। এ ছাড়া পুষ্টিকর সবজি তথা তরকারি হিসেবেও মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, ময়মনসিংহ, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল, যশোরে মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্র্রসারণ উপকেন্দ্র রয়েছে। এসব উপকেন্দ্র থেকে গত দুই মাস ধরে চাষিরা বীজ পাচ্ছেন না। সূত্রমতে, জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রটি বর্তমানে মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোতে এর কী ধরনের কার্যক্রম হবে সেটি নিশ্চিত নয় মাশরুম চাষিরা। চাষিরা সাভারের জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র এবং দেশের ১৬টি উপকেন্দ্র থেকে মাশরুমের বীজ কিনতেন চাষিরা। অনেক মাশরুম চাষি বীজ না পেয়ে ইতিমধ্যে চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া গ্রামের একটি মাশরুম পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুনসান নীরবতা। মাশরুম পরিচর্যা ও তোলা নিয়ে নেই কোনো ব্যস্ততা। এ গ্রামে শতাধিক চাষি রয়েছে। তারা ঘরের উঠোন, সিঁড়ি ও চৌকির নিচে মাশরুম চাষ করছিলেন। এখন মাশরুমের মাচাগুলো খালি পড়ে আছে। মাশরুম চাষের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার নারী চাষিদের চোখেমুখে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তাদের কেউ এ টাকা দিয়ে পরিবারের খাবার জোগান দেন, কেউ সন্তানের পড়ার খরচ চালান। এ প্রতিবেদককে তারা কৃষি বিভাগের লোক মনে করে যেভাবে হোক মাশরুম বীজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আকুতি জানিয়ে বলেন, নতুবা তাদের পথে বসতে হবে। খাড়াতাইয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট জসিম উদ্দিন জানান, অবসরের পর তিনি ও তার স্ত্রী সাহেরা বেগম ছয় বছর ধরে মাশরুম চাষ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। প্রতি মাসে তার ৩০ হাজার টাকা আয় হতো। তার দেখাদেখি প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন, শাহীনা বেগম, পারভীন বেগম, ইতি বেগম ও নূরজাহান বেগম মাশরুম চাষ করে ভালো আয় করছিলেন। এখন সবাই বীজ সংকটে বেকার হয়ে পড়েছেন। চৌদ্দগ্রামের খিদমাহ মাশরুম সেন্টারের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, অন্য পেশায় না গিয়ে মাশরুম নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম। নিজের ও স্বজনদের কাছ থেকে নিয়ে এখানে ৫০ লাখ টাকার পুঁজি বিনিয়োগ করেছি। এলাকার মানুষকে মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করেছি। যখন ব্যবসা জমে উঠছে তখনই বীজ সংকট দেখা দেয়। সহসা বীজ না পেলে পথে বসতে হবে। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রও স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। এদিকে মাশরুম না পেয়ে গ্রাহকও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও এলাকার কামরুন নাহার জানান, তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত মাশরুম খাচ্ছেন। এতে তারা অনেক সুস্থ আছেন। বর্তমানে তারা মাশরুম পাচ্ছেন না। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ড. নিরোধ চন্দ্র সরকার বলেন, প্রত্যেক প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রকে সম্প্রতি জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। এতে মাশরুমের টিস্যু ও স্পন উৎপাদনে সাময়িক সমস্যা হয়েছে। চাষি ও ভোক্তাদের নিরাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত উপকেন্দ্রগুলোতে মাশরুম বীজ পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে চাষিরা জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর