বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়েই কবিতাকে হত্যা

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়েই কবিতাকে হত্যা

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সূত্রাপুর বোর্ডঘর এলাকায় স্কুল গেটে দশম শ্রেণির ছাত্রী কবিতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি বিক্রম চন্দ্র সরকার ওরফে বিজয়। প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে কবিতাকে খুন করেছে বলে পুলিশের কাছে বিক্রম স্বীকার করেছে। গতকাল তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান রাসেল জানান, বিক্রম গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্রী খুনের ঘটনায় আটক বিক্রমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে কালিয়াকৈরের বিজয় সরণি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় কবিতার বাবা সাগর মণিদাস বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় মামলা করেছেন। জানা গেছে, স্কুলছাত্রী কবিতা রানী দাসের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর গজারিয়া কাঞ্চনপুর এলাকায় পৌঁছায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আÍীয়স্বজন, পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন ও সহপাঠীরা উপস্থিত হলে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বাবা-মা, নানা-নানী, মামা-মামিসহ নিকটাÍীয়দের কান্নায় এক হƒদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কারও কারও চোখ থেকে নেমে আসে পানি। সবারই দাবি, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা সৃষ্টিকারীর যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। বিকালে নিহতের লাশ সৎকারের জন্য তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে কবিতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উত্তর গজারিয়া (সূত্রাপুর বোর্ডঘর) এলাকায় মানববন্ধন হয়। এতে অংশ নেন বিজয় সরণি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আহŸায়ক মো. মফিজ উদ্দিন, কালিয়াকৈর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেন রানা, গোলাম নবী মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফিরোজ ইফতেখারসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে বাড়তি নিরাপত্তা দাবি করে বক্তব্য দেন। বিজয় সরণি উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল ক্লাসে কমসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম ছিল। এলাকাবাসী ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাবা-মা সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করার কারণে ঢাকার ধামরাই থানাধীন রামরাবণ এলাকার সাগর মণিদাসের মেয়ে কবিতা রানী দাস কালিয়াকৈর উপজেলার গজারিয়া কাঞ্চনপুর এলাকায় তার নানা ননীগোপাল মণিদাসের বাড়িতে থাকত। নানার বাড়িতে থেকে উত্তর গজারিয়া এলাকার বিজয় সরণি উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত কবিতা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল বাবা-মার একমাত্র মেয়ে।

২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী কবিতা মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি থেকে নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে স্কুলে রওনা হয়। স্কুল গেট থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক বিক্রম চন্দ্র সরকার তার গতি রোধ করে প্রেমের প্রস্তাব দিতে থাকে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কবিতা স্কুলে প্রবেশের চেষ্টা করলে বিক্রম তাকে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। কবিতা দৌড়ে স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্কুলের গেটে গিয়ে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এলাকাবাসী জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার ছোট কাঞ্চনপুর এলাকার রামপদ মণিদাসের ছেলে বিক্রম স্কুলে যাওয়া আসার পথে কবিতাকে প্রায়ই বিরক্ত করত। কবিতাকে সে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু কবিতা বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে। ঘটনার পরপরই ঘাতক প্রেমিক বিক্রম চন্দ্র সরকারকে এলাকাবাসী আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। আটক বিক্রম আশুলিয়ার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কালিয়াকৈর থানার ইন্সপেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মঙ্গলবারই কবিতার বাবা সাগর মণিদাস বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। বিক্রমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল সকালে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর