বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাটের সুদিন ফেরাতে মাঠে তিন মন্ত্রণালয়

বিশেষ প্রতিনিধি

পাটপণ্যের সুদিন ফেরাতে মাঠে নামছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে তিন মন্ত্রণালয়। পাটপণ্য বিশেষ করে পাটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দেশের পাটকলগুলোকে সারা বছর কর্মমুখর রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ছয়টি পণ্যে পাটজাত মোড়ক বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন বাস্তবায়ন করতে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে সপ্তাহব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হবে। দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও চাল উৎপাদনকারী এলাকাসহ রাজধানীর প্রবেশমুখে স্বরাষ্ট্র, বন ও পরিবেশ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং পাট অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাব একসঙ্গে অভিযান পরিচালনা করবে। অভিযানকালে পণ্যে পাটজাত মোড়ক না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এক প্রজ্ঞাপনপত্রে জানিয়েছে, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি উৎপাদনকারী এবং সরবরাহকারী ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ঋণ দেওয়া, নবায়ন ও বিতরণকালে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার শর্তারোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য প্যাকেটজাতকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার না করলে তাদের ব্যাংক ঋণ দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্র জানায়, পাটপণ্যের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান প্রোডাক্ট পাটের বস্তা বিশ্বের অনেক দেশে ধান-চাল সংরক্ষণের জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ধান, চাল, সার ইত্যাদি সংরক্ষণে পাটের বস্তার ব্যবহার কম। দেশের ভিতরে সব প্যাকিংয়ের কাজে প্রাকৃতিক তন্তু পাটপণ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট-২০১০’ নামে একটি আইন করেছে। এতে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিÑ এ ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ/বস্তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পণ্য মোড়কে পাটের বস্তা ব্যবহার করছেন না। এই আইনটি বাস্তবায়নে গত ২০ সেপ্টেম্বর বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজমের সভাপতিত্বে এক আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠকে ‘ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট-২০১০’ বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, দেশের সরকারি খাদ্যগুদামগুলোতে ধান, চাল সংরক্ষণের জন্য পাটের ব্যাগ/বস্তা ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। খাদ্য বিভাগ গত বছর বিজেএমসি থেকে সোয়া তিন কোটি পাটের বস্তা কিনেছে। বেসরকারি চাতাল মালিকরা পাটের বস্তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হলে বিজেএমসিকে প্রতি বছর অন্তত ৫০ কোটি পিস বস্তার জোগান দিতে হবে। এটা করা গেলে সরকারি পাটকলগুলোতে আরও বেশি জনবল নিয়োগ করা যাবে। বিজেএমসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল হুমায়ুন খালেদ (অব.) বলেন, ‘বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং অ্যাক্টে’র সুফল আমরা পাচ্ছি না। চাতাল মালিকরা বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের পাটের বস্তা নিতে চায় না। তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে মোট চাহিদার অর্ধেকও যদি পাটের বস্তা ব্যবহার করা হয় তাহলে দেশের সব পাটকল সারা বছর ব্যস্ত থাকতে পারে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ছয়টি বন্ধ পাটকল চালু করেছে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। পাটপণ্যের সুদিন ফিরে আসছে। পৃথিবীর অনেক দেশ সিনথেটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে ঝুঁকছে পাটের প্রতি। বিশ্ববাজারের আগামীর চাহিদা আমাদেরই পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, খাদ্য অধিদফতর অটো রাইস মিল, হাসকিং এবং চাতাল মালিকদের লাইসেন্স দেয়। তাদের লাইসেন্স দেওয়ার সময় পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার শর্তারোপের সিদ্ধান্ত হয়েছে আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠকে।  বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম বলেন, প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ফলে নদী-নালা, খাল-বিল এমনকি ঢাকার ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী পাটের ব্যবহার ও পাট রপ্তানির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। মোড়কীকরণের আইনটি বাস্তবায়ন হলে দেশের পাট চাষিরা উৎসাহিত হবেন এবং পাটকলগুলো পুরোদমে চালু হবে। এ জন্য আইনটি বাস্তবায়নে সারা দেশে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর