বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
২০ কোটি টাকা আÍসাৎ

কক্সবাজারের ডিসির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

মোস্তফা কাজল

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে চিংড়ি ঘেরের ক্ষতিপূরণ দেখিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা আÍসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। আÍসাতের সঙ্গে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিনসহ জেলা প্রশাসনের সাত কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার       এরপর তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পেয়েছে তদন্ত সংস্থা দুদক। গত মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্য কর্মকর্তারা হলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলও) আরেফিন আকতার, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, কানুনগো আবদুল কাদের ভূঁইয়া, সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও টি এম বাদশাহ মিয়া। অতিসম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। জানা গেছে, আগামী রবিবার দুদকের বোর্ড সভায় প্রতিবেদনটি অনুমোদন পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে দুদক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও ওই অর্থ আদায়ের সুপারিশ করা হয়। সূত্রটি আরও জানায়, এর আগে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকেও একবার তদন্ত করা হয়। মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও ওই সাত কর্মকর্তার যোগসাজশ ছিল বলে উলে­খ করা হয়। জানা যায়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ীর বাসিন্দা কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ ২৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২২ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে দুদককে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে শুরু হয় দুদকের তদন্ত। দুদকের তদন্তেও ওই সাত কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

এরপর গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলও) মাহমুদুর রহমান বাদী হয়ে ২২ কোটি টাকা ফেরত চেয়ে ২০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পাল্টা মামলা করেন। এ মামলার তদন্তও করছে দুদক। দুদক জানায়, ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লি. কর্তৃক ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মহেশখালীর মাতারবাড়ী এবং ধলঘাটা মৌজার ১ হাজার ৪১৪ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চিংড়ি ঘের ক্ষতিপূরণের টাকা লুটপাট নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দলের সদস্য ও তত্ত¡াবধায়ক (রাজস্ব) মো. মাশুক বিল্লাহ আরেফ খান গত ৩০ জুন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো যৌথ তদন্ত ছাড়া অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে মনগড়া ২৫টি চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ৪৫ কোটি ৭৮ লাখ ৮ হাজার ৯৮৬ টাকা রোয়েদাদ প্রস্তুত করে বেআইনিভাবে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা আÍসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়াও মাতারবাড়ীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমির ওপর অবৈধভাবে নির্মিত মেসার্স আলিফ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি লবণ কারখানার বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দেখিয়ে মিয়াজিপাড়ার এম রইচ উদ্দিনকে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৮ টাকা পরিশোধ করা হয়। এ ব্যাপারে পাউবোর পক্ষ থেকে লিখিত আপত্তি করা হলেও তড়িঘড়ি করে ওই টাকা পরিশোধ করা হয়। গণপূর্ত বিভাগের পরামর্শক্রমে লবণ কারখানার অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে সরকারি নীতিমালা থাকলেও এ ক্ষেত্রে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) কক্সবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক সনজীব বড়–য়া চৌধুরীর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনিবন্ধিত কাগজ দিয়ে চিংড়ির ক্ষতিপূরণের বিপরীতে প্রায় ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। অধিগ্রহণ করা ১ হাজার ৪১৪ একর জমির মধ্যে ৩৮৬ একর খাস ও ১ হাজার ২৮ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন। কিন্তু টাকা আÍসাতের জন্য চিংড়ি ক্ষতিপূরণের বিপরীতে ১ হাজার ৩৩৫ একর জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন দেখানো হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর