রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মার্কেল-পুতিনে আশীর্বাদ

আ স ম মাসুম, মেসিডোনিয়া থেকে

৫ সেপ্টেম্বর জার্মানি শরণার্থী নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার ঠিক এক দিন পরই গিয়েছিলাম জার্মানি। দেখলাম, মিউনিখের হাফবানোফ স্টেশনে আসা হাজার হাজার শরণার্থীকে বরণ করে নিচ্ছে জার্মানি। শত শত জার্মান তাদের ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের দিকে। সেদিন দেখেছি জাতি হিসেবে জার্মান কত গর্বিত অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সিদ্ধান্তে; আর হাজার হাজার শরণার্থীর           আশীর্বাদে সিক্ত হচ্ছেন মার্কেল! সে আশীর্বাদের ফোয়ারা চলছে আজও, এ মধ্য অক্টোবরে এখনো লাখ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীর একমাত্র আশার আলো তিনিই! শরণার্থী আশ্রয়ে আজ অ্যাঙ্গেলা মার্কেল মহীয়সী নারীর আসনে। যখন মেসিডোনিয়ার তাভানভসি স্টেশনে শরণার্থী প্রশংসার ফোয়ারায় ভাসছিল মার্কেলের নাম তখন স্থানীয় গাইড হাদিস আলিজা মনে করিয়ে দিলেন এ মেসিডোনিয়াতেই জন্মগ্রহণ করেন মানবকল্যাণে হিতৈষী নারী মাদার তেরেসা!

তবে শরণার্থীরা যে শুধু মার্কেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা নয়, তারা এখন ধন্যবাদের খাতায় তুলেছেন পুতিনের নাম! কেন, তা নিশ্চয়ই ব্যাখ্যার দরকার নেই। এবারের কিস্তিতে যখন রিফিউজি ক্রাইসিস এরিয়ায় যাই সেদিনই রাশিয়া সিরিয়ায় আইএসের ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে হামলা করে। পৃথিবীর সঙ্গে আপাত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হলেও এমন খবর বিদ্যুৎবেগেই ছড়িয়েছে শরণার্থীদের মধ্যে। সিরিয়ার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সমস্যার ওপর বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে গত এক বছরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা আইএস। সে আইএস প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে রাশিয়ার হামলায়, শরণার্থীরা ছুটে চললেও এটা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। ইরাক ও সিরিয়ার অনেক শহর দখল নেওয়া আইএসের কারণে অনেকেই বাড়িছাড়া, দেশছাড়া হয়েছেন। কথা হয় তারিক নামের এক তরুণের সঙ্গে। তারিক বলেন, নিজের দেশ বোমায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে এটা দেখা সবচেয়ে অমানবিক। তবে বোমার আঘাতে যদি আইএস ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে আবার হয়তো আমার দেশ ঘুরে দাঁড়াবে। ফাইরাজ নামের আরেকজন বলেন, দেশ বেদখল হয়ে গেল, সেই দেশ ধ্বংস হয়েছে আগেই, এবার যদি আইএসমুক্ত হয়ে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তাহলেই হয়তো একদিন আমার সন্তান ইয়ামান তার মায়ের কবর জিয়ারত করবে! ফাইরাজ ও তারিক দুজনই অকুণ্ঠচিত্তে ধন্যবাদ জানান পুতিনকে। আবার বিষোদ্গার করেন ব্রিটেন ও আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে! তাদের ধারণা, ব্রিটেন ও আমেরিকা চাইলে শুরুতেই আইএসকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া যেত। ইলিয়াস নামের এক যুবক বলছিলেন, আমাদের নেতা এখন মার্কেল আর পুতিন! অনেকটা অবাক করার মতোই! কতটা ভালোবাসার পরিধি ছড়ালে একজন নেতা নিজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠেন, তা জানা নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর