শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেড় ঘণ্টায় গাজীপুর টু কেরানীগঞ্জ

গাড়ি চলবে সংরক্ষিত লেনে : ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী পারাপার : ২০১৮ সালে একাংশ বাস্তবায়ন

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

দেড় ঘণ্টায় গাজীপুর টু কেরানীগঞ্জ

বিআরটিতে গাড়ি চলবে আলাদা লেনে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি নির্মিত হচ্ছে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত। এর একটি অংশ হবে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। অন্য অংশটি বিমানবন্দর সড়ক থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৪ কিলোমিটার। সোয়া কোটি মানুষের এই রাজধানীতে যানজট নিরসনে ৪২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বিআরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ যেতে সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। বিআরটি গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশের নকশা তৈরি শেষ। ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ মাসের শেষদিকে মূল কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী পারাপার হতে পারবে। সংরক্ষিত লেনের মাধ্যমে স্টেশন থেকে প্রতি তিন মিনিট পর পর ছেড়ে যাবে দ্রুত গতিসম্পন্ন অত্যাধুনিক বাস। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়কে পৌঁছাতে লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট।

যানজট নিরসনে বিআরটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি ব্যবস্থা। দুই ভাগে বিভক্ত এ প্রকল্পটির দক্ষিণাংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কেইস  প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়ন করবে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসিএ। এটি বিমানবন্দর সড়ক থেকে কুড়িল ইন্টারসেকশনের নিচ দিয়ে ও বনানী রেল ওভারপাসের ওপর দিয়ে মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান, নয়াবাজার ও বাবুবাজার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু হয়ে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এতে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য ১৬টি স্টেশন, দুটি বাস ডিপো এবং মহাখালী ও কাকরাইলে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। বিআরটি দক্ষিণের প্রকল্প পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজ শেষ। শিগগিরই ঋণচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পের উত্তরের অংশ গাজীপুর টার্মিনাল থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত। এডিবির অর্থায়নে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে। বাস স্টপেজে প্রবেশ-বের ও পথচারী পারাপারে ৩০টি আন্ডারপাস তৈরি করা হবে। ১৮ মিটার দীর্ঘ ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল করবে এ পথে। বাসগুলোয় ভাড়া আদায় হবে ইলেকট্রনিক স্মার্টকার্ড সিস্টেমে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা তৈরির কাজ চূড়ান্ত করেছে। এখন চলছে মাটি পরীক্ষার কাজ। রাস্তার প্রতি দিকে একটি বিআরটি লেন, দুটি মিশ্র ট্রাফিক লেন, একটি অযান্ত্রিক (সার্ভিস) লেন ও ফুটপাথ নির্মাণ করা হবে। আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার দোতলা রোড ও ৬টি ফ্লাইওভার থাকবে। রাস্তার মেইন করিডরের সঙ্গে সংযোগের জন্য ১১৩টি এক্সেস রোড, ২৫টি বিআরটি স্টেশন, গাজীপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। পুনঃনির্মিত সড়কের দুই পাশে উচ্চ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ করা হবে। ডিটিসিএর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, বিআরটি-৩ এর আগের রুট ছিল সদরঘাট থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে এটি গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর উত্তর অংশের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আরেকটি বাস্তবায়ন হলে বিআরটির মাধ্যমে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জে যেতে সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। এটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন চলাচল কমবে, যা যানজট অনেকটা হ্রাস পাবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হবে। এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো দ্রুতগতির হওয়ায় যাত্রীদের সময় বাঁচবে, দুর্ভোগও কমবে। বিআরটি প্রকল্পের এলজিইডি অংশের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান শেখ জানান, বাস ডিপো নির্মাণের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নলজানি এলাকায় বিটিসিএলের কাছ থেকে ৫ একর জমি লিজ নেওয়া হয়েছে। গত ১১ মে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়নের কাজও শেষ পর্যায়ে। বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মো. আফিল উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে প্রকল্পের মূল নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মূল নকশা অনুমোদনের জন্য এডিবি এবং সওজ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের মূল টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

সর্বশেষ খবর