বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিলবোর্ড নিয়ে বিপাকে সিটি করপোরেশন  

বৈধ-অবৈধ প্রশ্নে স্থগিত আইনি ব্যবস্থা গ্যাঁড়াকলে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি

লাকমিনা জেসমিন সোমা

বিলবোর্ড নিয়ে বিপাকে সিটি করপোরেশন

 

বিলবোর্ড উচ্ছেদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও নানামুখী জটিলতায় তা কার্যকর করতে পারছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। এদিকে শুধু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দুই সিটি করপোরেশন ঘোষিত সব বিলবোর্ড আদৌ অবৈধ হবে কি না তা নিয়েও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাঁড়াকলে পড়েছে রাজধানীর বিলবোর্ড-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটি।

বারবার সময় বেঁধে দেওয়ার পরও সাড়া না পাওয়ায় ৩০ সেপ্টেম্বর বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন মেয়র আনিসুল হক। ঘোষণা অনুসারে ১০ অক্টোবরের মধ্যে বিলবোর্ড সরিয়ে না নিলে মামলা বা জরিমানাসহ অন্য যে কানো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মেয়র।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মেয়রের এ ঘোষণার পরপরই বিলবোর্ড অ্যাসোসিয়েশনের নেতা-কর্মীরা তাদের দাবি নিয়ে ফের হাজির হন। বরাবরের মতো আবার মেয়রের কাছে সময় চান। কবে কোন বিলবোর্ডটি সরিয়ে  নেবেন এমন একটি পরিকল্পনাও সংস্থার কাছে তুলে ধরেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে যেসব বৈধ বিলবোর্ড অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল, সেগুলোকে ফের সুযোগ দেওয়া হয়। বাকি অবৈধগুলোর ক্ষেত্রে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন মেয়র। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বৈধ বিলবোর্ড ছিল দুই হাজার ১৫১টি। দক্ষিণ সিটিতে এ সংখ্যা ছিল ৪৭৬টি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই আড়াই হাজারের বাইরে দুই সিটিতে বর্তমানে অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা কমপক্ষে আরও তিন হাজার। তবে ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিটি করপোরেশনের বৈধ-অবৈধ সব বিলবোর্ডই অবৈধ ঘোষণা করেন উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। আর দক্ষিণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাননি মেয়র সাঈদ খোকন।

এদিকে মেয়র আনিসুল হকের এ সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করছেন দুই সিটির জন্য বিলবোর্ড-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, আউটডোর অ্যাডভারটাইজিং অ্যাসোসিয়েশনের দুই সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিভিন্ন পর‌্যায়ের মোট ১৪ জন সদস্য রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরা নিজেরাই আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে মহানগরে বৈধ বিলবোর্ডের চেয়ে দ্বিগুণ অবৈধ বিলবোর্ড রয়েছে। আমরা অনুসন্ধান করে জানাতে পেরেছি, সিটি করপোরেশনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের অলিখিতভাবে অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। কাগজে-কলমে এসব বিলবোর্ডের কোনো অস্তিত্ব নেই। পরবর্তী সময়ে এই অবৈধ ব্যবসায়ীরাই বৈধদের তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং নতুন করে ব্যবসার সুযোগ নিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেয়রকে ‘‘মিসগাইড’’ করার চেষ্টা করেছেন।’ অপর এক সদস্য জানান, অবৈধ বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যেসব ‘বৈধ’ বিলবোর্ড ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশনকে ভাড়া বা ট্যাক্সের টাকা দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন, তাদের অবৈধ বলে গণ্য করা মেয়রের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। কেননা ওগুলো অবৈধ নয়, বরং মেয়াদোত্তীর্ণ বিলবোর্ড। নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে তারা বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে বসবেন বলেও জানান এই সদস্য। এদিকে ডিএনসিসির একটি সূত্র বলছে, প্রভাবশালী বিলবোর্ড ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের সুপারিশের কারণেও উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে। একেকটি বিলবোর্ড অপসারণ করতে গেলেই বিভিন্নভাবে তা রক্ষার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী। এ প্রসঙ্গে উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বলেন, ‘এসব কাজ করতে গেলে এমন সুপারিশ একটু-আধটু আসে। তবে এ পর্যন্ত তেমন সিরিয়াস কিছু ঘটেনি।’ তাহলে আইনি ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েও বারবার কেন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রথমত তাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করছি। দ্বিতীয়ত, তারা নিজ থেকে বিলবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জমা দিয়েছেন সেটির মূল্যায়ন করছি। তৃতীয়ত, উত্তরের অগণিত অবৈধ বিলবোর্ড সরাতে আমরা নিজেরাই হিমশিম খাচ্ছি। যে কারণে আমরা চাইছি, কেউ যদি নিজ থেকে সরিয়ে নেন তাহলে আমাদের জন্যই ভালো।’ এদিকে দক্ষিণ সিটিতে ইউনিপোল ও প্রাইভেট অফিস-বাড়ির ওপর স্থাপিত বিলবোর্ড অপসারণ অব্যাহত থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ অবৈধ বিলবোর্ডের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। গতকাল সংশ্লিষ্ট দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, এই সিটিতে ১৭৬টি অবৈধ ইউনিপোলের মধ্যে ১১৮টি উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাড়িঘর ও অফিসের ওপর নির্মিত প্রাইভেট বিলবোর্ডও অপসারণ হচ্ছে। তবে ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হওয়া ‘অবৈধ’ বিলবোর্ডের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। বিলবোর্ড নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্য নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘খসড়া নীতিমালার কাজ প্রায় শেষ। তবে বৈধ-অবৈধ নিয়ে যে জটিলতা থেকে গেছে, এর সুষ্ঠু সমাধান করেই আমরা চূড়ান্ত নীতিমালা প্রস্তুত করব।’

 

সর্বশেষ খবর