বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কুমারী পূজায় দর্শনার্থীর ঢল

প্রিন্স বিশ্বাস

কুমারী পূজায় দর্শনার্থীর ঢল

‘দুর্গা মা-ই কি, জয়’ ধ্বনির সঙ্গে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, ঢাকঢোলের বোল ও শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত করে শুরু হয় কুমারী পূজা। ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ শারদীয় দুর্গোৎসবের এ কুমারী পূজা। কুমারী পূজা দেশের রামকৃষ্ণ মিশন মঠগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। কুমারী পূজা উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ প্রাঙ্গণে ভক্ত ও দর্শনার্থীর ঢল নামে। ভক্ত, পূজারি ও দর্শনার্থীর সমাগমে মহাসাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। আজ দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন মহানবমী ও বিজয়া দশমী। আর এরই মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এ ধর্মীয় উৎসব। হাজারো ভক্ত চোখের জলে সিক্ত হয়ে একটি বছরের জন্য বিদায় জানাবেন মাকে। দেবী ফিরে যাবেন শ্বশুরালয় কৈলাসে। তবে আগামীকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিতে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের পক্ষ থেকে দেশের পূজা উদ্যাপন কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল সকাল পৌনে ১১টায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সকাল থেকেই পূজারী, ভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসুক মানুষের ঢল নামে। হিন্দু শাস্ত্রীয় বিধি মতে, পুরোহিতরা ১৬ বছরের নিচে কোনো কন্যার মধ্যে ‘দেবীত্বের লক্ষণ’ উপলব্ধি করে কুমারী পূজার জন্য নির্বাচন করে থাকেন। ৬ বছর বয়সের প্রণিতা উষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরোহিতরা এ বছর কুমারী দুর্গা দেবী হিসেবে নির্বাচন করেন। শাস্ত্রমতে তার নাম দেয়া হয় ‘মালিনী’। প্রণিতা উষ্ণ রাজধানীর সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স কিন্ডারগার্টেনের লোয়ার কেজি শ্রেণির ছাত্রী। পূজার আনুষ্ঠানিকতার পূর্বে ফুলচন্দন, প্রসাধন, লাল টুকটুকে বেনারসি ও বিভিন্ন অলঙ্করণে সজ্জিত করে গাঁদা ফুল আর বেলপাতা বেষ্টিত আসনে কুমারী দেবী মালিনীকে অধিষ্ঠিত করা হয়। পরে শাস্ত্রীয় বিধি ও মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক দেবী দুর্গার প্রতীকরূপে মাতৃজ্ঞানে তাকে পূজা দেওয়া হয়। ভক্তরা কুমারী দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে জগতের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করেন। কুমারী পূজা পরিচালনা করেন কল্যাণ মহারাজ। এ সময় তন্ত্রধারক ছিলেন স্বামী স্থিরানন্দ। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ রুবেশানন্দ মহারাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুমারী পূজার মাধ্যমে মাতৃভাব বোঝানো হয়। এ পূজার মধ্য দিয়ে আমরা মাকে চিনব। মা যেমন সন্তানকে ভালোবাসে তেমনি আমরাও আমাদের সন্তানদের ভালোবাসব।’ পূজা শেষে প্রণিতা সাংবাদিকদের বলেন,‘ সবাই আমাকে পুজো দিয়েছে, আমার ভালো লাগছে। সবাই যেন ভালো থাকে আমি দেবীর কাছে সেই আশীর্বাদ করছি।’ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিত রণজিৎ চক্রবর্তী জানান, আজ মহানবমীর দিন মণ্ডপে সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন হবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে দুপুর ১২টায় স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিকাল ৪টায় বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিদিনের মতো পূজা শেষে অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতির আয়োজন থাকবে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভক্তদের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সর্বশেষ খবর