শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জোড়াতালিতে চলছে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

জোড়াতালিতে চলছে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল

গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালের অবকাঠামো মাত্র ৩০ বছরের মাথায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একদিকে ব্যবহার অনুপযোগী ভবন, দুর্গন্ধময় পরিবেশ অন্যদিকে চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে বেহাল অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসাব্যবস্থা। নোংরা পরিবেশ ও দুর্গন্ধে বিছানায় শুয়ে থাকতে পারছেন না রোগীরা। রোগীর সঙ্গে আসা সুস্থ মানুষও যেন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ওয়ার্ডের পাশে এবং জরুরি বিভাগের সামনেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, মল-মূত্রের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও অকার্যকর। ফলে জমে থাকা ময়লায় পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলার প্রায় ২৬ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ১২ বছরেও হাসপাতালে জনবল বাড়ানো হয়নি। ২০১৪ সালের ২৮ মে আবারও হাসপাতালটি ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অথচ  ১০০ শয্যার জনবলও এখানে নেই। হাসপাতালে   ৪১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। আর ১৩৯ পদের কর্মচারীর বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৫৩ পদ। গাইনি, চক্ষু, চর্ম ও যৌন বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না। এ ছাড়া সার্জারি বিভাগ ছাড়া আরও ৯টি বিভাগে কোনো সিনিয়র কনসালটেন্ট নেই। শিশু, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, এনেসথেসিয়া, অর্থপেডিক্স বিভাগ চলছে একজন করে জুনিয়র কনসালটেন্ট দিয়ে। জরুরি বিভাগে তিনজনের স্থলে আছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। ফলে পুরো চিকিৎসাব্যবস্থাই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। সম্প্রতি হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে প্রবেশ পথে চালু করা ‘তথ্য কেন্দ্র’ তালাবদ্ধ। রোগীদের বসার চেয়ার ভাঙা, ওয়াটার পিউরিফায়ারগুলো অচল হয়ে আছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি অন্তত ৫০ জন রোগী হাসপাতালের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে। ময়লা বিছানা ও চাদর দেওয়া হলেও বালিশ বা মশারি দেওয়া হয় না বলে রোগীরা অভিযোগ করেন। টয়লেটগুলোর দরজা পর্যন্ত নেই, এর সঙ্গে দুর্গন্ধ ও ময়লায় ব্যবহার করা দুষ্কর।  হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. এস আই এম শাহীন বলেন, রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার সময় বালিশ জমা দেয় না বলে সাবধানতার জন্যই অনেক ক্ষেত্রে বালিশ দেওয়া হয় না। আর মেঝে ও বারান্দার রোগীদের মশারি দেওয়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যক মশারি নেই। হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী গ্রামের মাসুদ মিয়া জানান, বারান্দায় সারা দিন মানুষের চলাচলের কারণে তাদের পায়ের ধুলাবালি বিছানায় এসে পড়ে। আর পাশেই ড্রেনের দুর্গন্ধ সেখান থেকে সারারাত মশার আক্রমণে রাতে ঘুমানোর সুযোগ নেই। চাইলেও মশারি দেওয়া হয় না। ২৬ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন সদর উপজেলার বালুয়া গ্রামের মোখলেছ উদ্দিন জানান, তার ভাঙা হাতের এক্সরে বাহির থেকে করতে বলেছিলেন ডাক্তার। তাই বাহির থেকে ২০০ টাকা দিয়ে এক্সরে করিয়েছেন। আবার হাতের প্লাস্টার করতেও হাসপাতালেই ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে কোনো রশিদ ছাড়াই। ওষুধও বেশির ভাগ বাহির থেকে কিনতে হয়। বারান্দায় চিকিৎসাধীন এক মহিলা রোগী জানালেন, তার আলট্রাসনোগ্রাম বাহির থেকে করিয়ে আনতে বলেছেন। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন নেই। আর আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট যা দু-একদিনের মধ্যে ঠিক হবে। রশিদ ছাড়া হাসপাতালে কোনো লেনদেন হওয়ার কথা নয়। রোগীরা জানান, ওয়ার্ডে সুইপার দিনে একবারে এসে কোনো রকমে ঝাড়ু দিয়ে চলে যায়। হাসপাতালে খাবারের মানও ভালো নয়। বাহিরে থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। গাইবান্ধা যুব নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক জনি জানান, দৃশ্যত হাসপাতালে কোনো চিকিৎসার পরিবেশ নেই। ময়লা দুর্গন্ধ পরিবেশ নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালে যে যার খেয়াল-খুশি মতো চলছেন। ডাক্তার, নার্স, প্যাথলজিস্ট, কর্মচারী যখন যেমন ইচ্ছা আসছেন যাচ্ছেন। যে কারণে একেবারে গরিব-অসহায় রোগী ছাড়া কেউ এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায় না। সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, হাসপাতালের অবকাঠামো ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকসহ জনবল সংকটও রয়েছে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর