শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন এক নরক!

নিজামুল হক বিপুল, কক্সবাজার থেকে

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন এক নরক!

ঢাকা থেকে সড়কপথে কক্সবাজার পৌঁছতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছেন তরুণ সাব্বির আহমদ। বুধবার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে তিনি কক্সবাজার পৌঁছেছেন বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায়। টানা প্রায় ১৪ ঘণ্টার জার্নি। অথচ দূরত্বের কথা বিবেচনা করলে স্বাভাবিকভাবে মাত্র ৮ থেকে ১০ ঘণ্টায় তার পৌঁছার কথা ছিল কক্সবাজারে। কিন্তু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের একটি দীর্ঘ অংশ বিশাল বিশাল খানাখন্দে ভরপুর থাকার কারণে তাকে দীর্ঘ সময় পথেই কাটাতে হয়েছে। শুধু তিনি নন, তিন দিনের টানা ছুটি আনন্দময় করতে গত দুই দিনে পর্যটননগরী কক্সবাজার পৌঁছেছেন লাখো পর্যটক। বেশির ভাগই ছিলেন সড়কপথের যাত্রী। তাদের প্রত্যেককেই রাস্তার এই অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কক্সবাজার পৌঁছার পথে। সাব্বির বলেন, ‘নরক-যন্ত্রণা টের পেতে হলে আপনি একবার সড়কপথে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার গেলেই হবে।’ এই প্রতিবেদকও বুধবার রাত ১০টায় রওনা হয়েছিলেন কক্সবাজারের পথে। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের চকোরিয়া পর্যন্ত রাস্তার দুরবস্থার কারণে গন্তব্যে পৌঁছেছেন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। টানা প্রায় ১৪ ঘণ্টার ওই জার্নির সময় সরেজমিন দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদী পার হয়ে পটিয়া পৌঁছার পরই শুরু হয় এই সড়কের নরক-যন্ত্রণা। দীর্ঘ জার্নির সময় এই সড়কে দেখা মেলে হাজারো খানাখন্দের, যেগুলো নারী-শিশুসহ প্রত্যেক যাত্রীকে ভুগিয়েছে প্রতি মুহূর্তে। সরেজমিন দেখা গেছে, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, আমিরাবাদ, বটতলী স্টেশন রোড, লোহাগাড়া, আধুনগর, ইঞ্জিনিয়ার মার্কেট, চুনতি বাজার, বরইতলী বাজার এবং চকোরিয়া পর্যন্ত মাইলের পর মাইল সড়কটি হাজারো খানাখন্দে ভরপুর। এ পথে চলাচলকারী বিলাসবহুল এসি কোচ থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী সাধারণ বাস, প্রাইভেট গাড়ি সবাইকে দীর্ঘ যুদ্ধ করে তবেই পৌঁছতে হয়েছে এবং হচ্ছে পর্যটননগরী কক্সবাজারে। শুধু তা-ই নয়, মেরিন ড্রাইভের একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এ সড়ক ধরেই গতকাল বিকালে কক্সবাজার পৌঁছেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়কের এই করুণ অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারের কর্মকর্তারা বললেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের যে অংশটির এমন করুণ পরিণতি, এর পুরোটাই পড়েছে সওজের দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতরের অধীন। তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। জানতে চাইলে দোহাজারী নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা সওজ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলী সম্প্রতি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তাকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি পুরো রাস্তার বিষয়ে অবগত জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ অবস্থার উন্নতি হবে। সরেজমিন দেখা গেছে, পটিয়া অংশে ইটের খোয়া ফেলে সাময়িকভাবে খানাখন্দ ভরাটের কাজ চলছে। তবে এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ১৯৬ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রাম থেকে পর্যটননগরী কক্সবাজারের দূরত্ব হচ্ছে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার। চার লেনের কাজ চলার কারণে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে এখন সময় লাগে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা। এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে জ্যামের কারণে অতিরিক্ত সময় লাগছে। আর চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে কক্সবাজার পৌঁছতে সময় লাগে স্বাভাবিকভাবে মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এখন কেউ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পৌঁছতে গেলে তাকে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। শুধুক্ষু রাস্তার করুণ হালের কারণেই অতিরিক্ত ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগছে।

সর্বশেষ খবর