সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জলে গেল গুলশান লেকের টাকা

লাকমিনা জেসমিন সোমা

জলে গেল গুলশান লেকের টাকা

বেড়েই চলেছে গুলশান-বারিধারা লেকের পরিবেশ দূষণ। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক উদ্যোগ সত্ত্বেও রক্ষা হচ্ছে না রাজধানীর এই অতি গুরুত্বপূর্ণ লেকটি। আশপাশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনার বর্জ্য সরাসরি লেকের পানিতে মিশে দিন-দিন মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ছে এলাকার পরিবেশ। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলশান লেকের দূষণ প্রতিরোধে অনুমোদিত প্রকল্প বাবদ ওয়াসাকে যে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল, তার পুরোটাই গচ্চা গেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চলতি মাসে এ নিয়ে ফের ওয়াসা এবং রাজউককে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের মহানগর কার্যালয়। চিঠিতে দূষণরোধে অনতিবিলম্বে এ দুই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তা না হলে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেছে পরিবেশ অধিদফতর।

পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ৮ তারিখে অধিদফতরের মহানগর কার্যালয়ের পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল সরেজমিন পরিদর্শনে যায়। এই দলে রাজউকের ‘গুলশান লেক উন্নয়ন প্রকল্পে’র পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে ১২ অক্টোবর রাজউক ও ঢাকা ওয়াসাকে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। উভয় চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সার্বিক পরিদর্শনে জানা যায়, গুলশান-বারিধারা লেকের পাশে বিদ্যমান বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনার পয়ঃবর্জ্য সরাসরি লেকে অপসারণ করা হয়। যা লেকের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ব্যবস্থার অবনতি প্রধান কারণ।’ এর আগে সরকার ২০০১ সালে গুলশান-বারিধারা লেক-কে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। একই সঙ্গে লেকের চারপাশে বাসা-বাড়ি, বৈদেশিক মিশন, শিল্প-প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সৃষ্ট বর্জ্য এবং তরল বর্জ্য নির্গমন নিষিদ্ধ করা হয়। জানা গেছে, সরকারের ঘোষণা সত্ত্বেও এখনো বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বর্জ্য এসে মিশছে লেকের পানিতে। এর মধ্যে বারিধারা ডিওএইচএস, কালাচাঁদপুর, বনানী ১১৮ নং রোড, ন্যাম ভিলার দক্ষিণে বনানী ২ নং রোড, মহাখালী-গুলশান লিংক রোড, গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের নিচ এবং কড়াইল লেকসংলগ্ন বস্তি এলাকায় অনেক নালা রয়েছে। এমন কি কড়াইল বস্তি এলাকায় অনেক টয়লেটেরও সরাসরি সংযোগ রয়েছে এই লেকের সঙ্গে। অথচ এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘পলিউশন কন্ট্রোল মেজারস অব গুলশান-বারিধারা লেক বাই ডাইভার্টিং দ্য ড্রেনেজ আউটলেটস’ নামে ওয়াসাকে ৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০১২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় ২০১৪ সালের জুনে। তবে যেসব সংযোগ পয়েন্ট থেকে মানুষের মলমূত্রসহ বিভিন্ন আবর্জনা লেকের পানিতে এসে পড়ে সেসব সংযোগ বন্ধ করতে না পারায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরও লেকের দূষণ ও দুর্গন্ধ বহাল রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  জানা গেছে, ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গুলশান-বারিধারা লেক দূষণ নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকেই পূর্ব গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, লেকের দূষণ রোধে ওয়াসার প্রকল্পের নামে সরকারের ৫০ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। গুলশান-বারিধারা লেকে পতিত যতগুলো ড্রেনেজ আউটলেট পয়েন্ট ডাইভার্ট করার প্রয়োজন ছিল সবটিতেই প্রকল্পভুক্ত করা হয়নি। ফলে যে উদ্দেশ্যে ৫০ কোটি টাকা দিয়ে লেকটি দূষণমুক্ত করার কথা ছিল তা অর্জিত হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় যাচাই-বাছাই না করে এবং সব দিক বিবেচনা না করে প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যদিও অপচয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। আর রাজউকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পরিবেশ অধিদফতর চিঠি দিলেও তাদের পক্ষে দ্রুত সব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে দূষণের মূল হোতা কড়াইল বস্তি বিটিসিএলের অধীনস্থ হওয়ায় সহজে কিছু করতে পারবে না রাজউক। এ নিয়ে তারা গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর