সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জনবল ও অবকাঠামো সংকটে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

জনবল ও অবকাঠামো সংকটে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল

২৪ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জের উচ্চ চিকিৎসার একমাত্র স্থান সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল। বিপুলসংখ্যক মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার এ হাসপাতালটি দীর্ঘ দিন ধরে ধুঁকছে অবকাঠামো ও জনবল সংকটে। ভালো চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এক-চতুর্থাংশ জনবল নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হয়েছে চিকিৎসা সেবা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, অবকাঠামোর ব্যবস্থা না করে ১৯৯৬ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতালকে কাগজপত্রে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা করা হয়। এর মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগ বাড়ানো হয় আরও ২০টি শয্যা। পরে ৭০ শয্যার অবকাঠামো দিয়ে এটিকে উন্নীত করা হয় ২৫০ শয্যার হাসপাতালে। শয্যা ৭০টির মতো  থাকলেও প্রতিদিন ২২০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। যাদের ভাগ্য ভালো তারা শয্যা পান, বাকিদের স্থান হয় মেঝেতে। সূত্র জানায়, সদর হাসপাতালে অবকাঠামো সংকটের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে প্রকট জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ডাক্তারের পদ ৫৯টি থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২১ জন। হাসপাতালে ২২৩ জন নার্স থাকার কথা থাকলে বাস্তবে আছেন ৩৫ জন। মামলাজনিত কারণে ১২০ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নিয়োগ স্থগিত থাকায় আয়া, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নকর্মীর পদগুলোর বেশিরভাগ রয়েছে শূন্য। তবে ইউনিসেফের এমএনএইচআই প্রকল্প হাসপাতালে চারজন ডাক্তার ও ছয়জন পরিচ্ছন্নকর্মী দিয়ে চিকিৎসাসেবায় সহযোগিতা করছে। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, একটি ওয়ার্ডে ভর্তি ২০ জনেরও বেশি রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন একজন মাত্র নার্স। ২৩ অক্টোবর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিলেন ৭০ জন। সকালে ২০ জনকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর বাকি ৫০ জনকে সেবা দিচ্ছেন তিনি। কর্মরত নার্স নাসরিন সুলতানা জানান, নাওয়া-খাওয়ার সুযোগ নেই। একা ৫০ জন রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের রিনা বেগম বলেন, বেড না থাকায় দুই দিন ধরে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। রোগীর ভিড়ের কারণে কাক্সিক্ষত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তিনি ডাক্তার ও নার্স সংকট দূর করে ভালো চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আহ্বান জানান। চিকিৎসা নিতে বহির্বিভাগে আসা নূরে আলম মিল্টন বলেন, জেলা সদরের একটি হাসপাতালে এভাবে ডাক্তার ও নার্স সংকট থাকবে তা কাম্য নয়। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ সংকট দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। তবে সার্জারি বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ গোলদার বলেন, জনবল ও অবকাঠামো সংকট থাকলেও অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থায় সদর হাসপাতাল। অপ্রতুল জনবল ও অবকাঠামো সত্ত্বেও রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা। প্রতিদিন ছোট-বড় ১৫টির মতো অপারেশন হচ্ছে এখানে। সচল রয়েছে প্যাথলজি বিভাগ, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন। যা এক সময় ছিল সোনার হরিণের মতো। আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিক আহমদ জানান, অনেক কিছু সংকট থাকার পরও আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের ভালো চিকিৎসাসেবা দিতে। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকারের অপারেশন হচ্ছে, যা আগে হতো না। তার দাবি, দু-একটি ওষুধ ছাড়া বাকিগুলো হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের পূর্বপাশে সাততলা একটি ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী জুলাই মাসে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। তখন শয্যা সংকট অনেকাংশে দূর হবে। পাশাপাশি একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগও নেওয়া হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর