মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচনের প্রস্তুতি

গোলাম রাব্বানী

ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচনের প্রস্তুতি

পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানে দুটি টাইম ফ্রেম টার্গেট করে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার (পৌর) আইনের সংশোধনীর ওপর নির্ভর করছে এ নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ। তবে আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রায় আড়াইশ পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠানের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে যথাসময় স্থানীয় সরকার আইনের সংশোধনী হলে আগামী মাসের (নভেম্বর) তৃতীয় সপ্তাহে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ জন্য দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পৌর-ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় বিধিমালা সংশোধনের জন্য সব খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছে ইসি। স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন সংশোধন করলেই ইসি তাৎক্ষণিকভাবে বিধিমালাও প্রস্তুত করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তবে আইন সংশোধনে বেশি দেরি হলে পৌরসভা নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের জানুয়ারিতে পৌরসভা নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে অধিকাংশ পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবে। তাই আমাদের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।’ অন্যদিকে পৌরসভা নির্বাচনের পাশাপাশি আগামী মার্চের মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি গ্রহণ করছে ইসি। এ ছাড়া এ দুই নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর কাগজসহ নির্বাচনী সব মালামাল সংগ্রহের কাজও চলছে। আগামী মাসের প্রথম দিকে পৌরসভা নির্বাচনের ব্যয়ের চূড়ান্ত বিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠানো হবে। তবে এ নির্বাচনের জন্য আপাতত ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আমরা শুনছি আইনে পরিবর্তন হবে। সঠিক সময়ের মধ্যে আইন হয়ে এলে আমাদের নির্বাচন করতে কোনো সমস্যা হবে না। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষের আগে আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’ তবে ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার। অন্য একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘ডিসেম্বরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার আইন সংশোধন করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় নিলেও আমরা ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন করতে পারব। তবে আইন সংশোধন করতে সময় বেশি লাগলে আমাদের জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন করতে হবে।’ তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে অধিকাংশ পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবে। তাই পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। জানুয়ারিতে করতে হলেও তেমন সমস্যা হবে না।’ ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার চাইলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এ ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার ছাপানো ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ইসি। এবার প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হওয়ায় সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগের ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ আগেভাগে এগিয়ে রাখা হতো, কেননা সারা দেশে একই ব্যালটে ভোট হতো। এবার একটু ব্যতিক্রম হচ্ছে। তাই প্রার্থী চূড়ান্ত হলেই ব্যালট পেপার ছাপতে হবে। এ জন্য একটু সময় বেশি লাগতে পারে। তবে কমিশনের জন্য এটা কোনো সমস্যা নয় বলে জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি চলছে; যাতে ডিসেম্বরের শেষ ভাগে পৌর নির্বাচন করা যায়। এক দিনে ভোটের ইঙ্গিত দিয়ে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বছরের শেষ ভাগে নির্বাচন উপযোগী হবে যেসব পৌরসভা, সেগুলোয় একসঙ্গে এক দিনে করা যেতে পারে। জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে ভোটার স্থানান্তর কার্যক্রম নভেম্বরে শেষ করার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে যে সম্ভাব্য ২৪৫টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেসব পৌরসভার ভোটার স্থানান্তর কার্যক্রম ১০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। নির্বাচনের তারিখ, প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ জানিয়ে ইতিমধ্যে দেশের ৩২৩টি পৌরসভার তালিকা দিয়েছে সরকার। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়াদ রয়েছে পৌরসভার। উল্লেখ্য, সর্বশেষ এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন ২০১১ সালের ১২, ১৩, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি চার দিনে পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করে।

 

সর্বশেষ খবর