মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রতিকূলতার মধ্যেও মৎস্য সম্পদ বেড়েছে

অরক্ষিত সুন্দরবন শেষ

সামছুজ্জামান শাহীন, সুন্দরবন থেকে ফিরে

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ আগের তুলনায় বেড়েছে। এটি আশাজাগানিয়া খবর। জেলেরা বলছেন, গত বছরও সুন্দরবনের গহিনের খালগুলোয় মাছ পাওয়া কঠিন ছিল। এখন সুন্দরবনের বাইরের অংশের বড় বড় নদীর মুখের খালেও পর্যাপ্ত মাছ ধরা পড়ছে। প্রজাতিও বেড়েছে মাছের।

১২ অক্টোবর হাড়বাড়িয়া এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়া মংলা উপজেলার জেলে মোকাররম গাজী বলেন, ‘গেল বছরে মাছটাছ খুব একটা হোইনি। এবার বনে আইসে মাছ ভালোই হোচ্ছে। সপ্তায় দেড়-দুই মণ মাছ পাচ্ছি।’ আরেক জেলে ইবরাহিম শিকদার বলেন, ‘আগের বছর মাছের জন্যি বনের মদ্দির খালে খালে ঘুরতি হইছে। এবার যে খালে জাল পাতিছি সেহিনিই মাছ পাইছি।’

বন বিভাগ  সূত্রে জানা যায়, সিডর ও আইলার পর সুন্দরবনের মধ্যে মাছ ধরা ও চিংড়ির রেণু পোনা আহরণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। বেশ কিছু এলাকা অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সেখানে সব ধরনের মাছ বা কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে বনের মধ্যে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বা নৌকার অবাধ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বনের মধ্যে বিরক্তমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসে; যা মাছের প্রজননসহ বংশ বাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। জানা যায়, পশ্চিম সুন্দরবনের একটি বড় এলাকায় এখন বিপুল পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বন ছাড়িয়ে নদীতেও পাওয়া যাচ্ছে মাছ। খুলনার ২১ জেলার দায়িত্বে থাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহিদুল কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকায় মাছ বেড়েছে এ কথা ঠিক। সম্প্রতি মান্দারবাড়িয়া ঘুরে এখানকার খালগুলোয় প্রচুর মাছ লাফালাফি করতে এবং পানির উপরিভাগে মাছের পোনা ভাসতে দেখেছি; যা আগে দেখা যেত না। বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রলিং চালু হওয়া, সব ধরনের ইঞ্জিনচালিত ট্রলার এবং নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ধরা পুরোপুরি বন্ধ করার কারণে হয়তো এ সুফল পাওয়া যাচ্ছে। মাছের বংশ বৃদ্ধির বিষয়টি এখন হয়তো খুব অল্প স্কেলে চোখে ধরা পড়ছে। তবে বন বিভাগ যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আগামীতে খুব ভালো একটা সুফল দেখতে পাব।’ তিনি বলেন, কেবল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবনের উদ্ভিদসহ প্রাণিকুল বেড়েছে না কমেছে তার সঠিক চিত্র নিরূপণ করা হয়নি। এ বিষয়ে এখন পদ্ধতিগতভাবে জরিপ হওয়া খুবই প্রয়োজন। এটা হলে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য একটি চিত্র পাওয়া যাবে। তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণও সহজ হবে। বিদেশি অর্থসহায়তায় এসব বিষয়ে খুব শিগগির কাজ শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর