মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অক্সিজেনে টিকে আছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল

মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু, বরগুনা

অক্সিজেনে টিকে আছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল

দক্ষিণ উপকূলের জনপদ বরগুনা জেলার ১২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা টিকিয়ে রাখা হয়েছে কোরামিন আর অক্সিজেন দিয়ে। প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৭-৮ শতাধিক রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি দেড় শতাধিক রোগীকে অন্তঃ বিভাগে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে মাত্র সাতজন চিকিৎসককে। ১৯৯৬ সালে ৫০ শয্যা থেকে হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৫০ শয্যারও মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ হয়নি। জেলার গুরুত্বপূর্ণ ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার,  চোখ,  কান, নাক, গলা, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, অ্যানেসথেসিয়া ও ডেন্টাল সার্জনসহ মঞ্জুরিকৃত গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো চিকিৎসক নেই। অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ অপারেশনের কাজ হচ্ছে না। এ ছাড়াও মেডিকেল অফিসার পদে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তারা যোগদানের পর ছুটি নিয়ে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। রোগী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্স দুটি বছরের ১০ মাসই থাকে অকেজো। ১০০ শয্যার হাসপাতালে একজন মাত্র সুইপার থাকায় পয়োনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থারও বেহাল অবস্থা। বর্জ্য অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভিতর ও বাইরে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। হাসপাতালে চলতি দায়িত্বে থাকা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার পর শুধু খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫০ শয্যার মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসক বা জনবলও এখানে নেই। আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকরা থাকতে চাচ্ছেন না বলেও তিনি জানান। এ হাসপাতালের চেয়েও দুরবস্থায় উপজেলাগুলোর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। আমতলী উপজেলার ৫০০ শয্যার হাসপাতালে ২১ জন চিকিৎসক পদ থাকলেও রয়েছেন চারজন। বেতাগীতে ২১ জনের স্থানে রয়েছেন দুজন। পাথরঘাটায় ২১ জনের স্থানে রয়েছেন ৮ জন। বামনা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা কাগজপত্রে রয়ে গেছে। সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩ জন।  নবগঠিত তালতলী উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য ৬ একর জমিতে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হলেও সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তালতলীর বড়বগী ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মং ফ্রো একটি কক্ষে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে ২০ শয্যার হাসপাতালের জন্য সাতজন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১ জন মেডিকেল অফিসার। তাকেও নিয়মিত পাচ্ছেন না রোগীরা। হাসপাতাল চত্বরসহ অন্য কক্ষগুলো সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের দখলে চলে যায় বলে স্থানীয়রা জানান। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তারা তালতলী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সাত বছরে একবারের জন্যও হাসপাতালটি পরিদর্শন করেননি। তাদের দাবি, সরাসরি প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করলে তাদের স্বাস্থ্যসেবার  উন্নয়ন হবে না। বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. রুস্তম আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতালে যে চিকিৎসক ও জনবল এখানে তাও দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত দাবি জানানো সত্ত্বেও চিকিৎসকের শূন্যপদ পূরণ হচ্ছে না। একই সঙ্গে ১০০ শয্যার জন্য বরাদ্দকৃত সব শূন্যপদ পূরণ না হলে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বরগুনা জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের অবকাঠামোগত কাজ শুরু হলেও কবে নাগাদ শেষ হবে তা অনিশ্চিত। ২৫০ শয্যার হাসপাতালেও মঞ্জুরিকৃত পদ পূরণ হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কায় সচেতন নাগরিকরা।

সর্বশেষ খবর