শিরোনাম
বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় ঘুরপাক ফোর লেনের

সময় বাড়ানোর নতুন প্রস্তাবে মন্ত্রীর ‘না ► প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা

নিজামুল হক বিপুল

অনিশ্চয়তায় ঘুরপাক ফোর লেনের

দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। দফায় দফায় সময় বাড়লেও কাজ শেষ হওয়ার লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন আবার সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পের পক্ষ থেকে। তবে এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয়ের সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশ্য প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরই এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়ে যাবে। মাত্র ৩০ কিলোমিটার সড়ক পাকা করা বাকি। নানা সমস্যার কারণে এ অংশটুকুর কাজের গতি বেশ শ্লথ। তবে কর্তৃপক্ষ যতই আশ্বাস দিক না কেন যে আগামী জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এ কথার ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না সড়ক ব্যবহারকারীরা।

অবশ্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি, এ প্রকল্পের সময় আর বাড়াব না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। কারও চিঠিতে কোনো কাজ হবে না। বাড়াবাড়ি করলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিনোহাইড্রোকেও বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। যদি সময় বাড়াতে হয়, তাহলে আমি বলে দিয়েছি, কম সময়ে দ্রুত কাজ শেষ করা যায় এমন বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ১৯২ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন চার লেন প্রকল্প ১০টি প্যাকেজে ভাগ করে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশনকে দুটি প্যাকেজ ও টিবিএল-এসিএলকে দেওয়া হয় একটি প্যাকেজ। বাকি সাত প্যাকেজের কাজ দেওয়া হয় চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে। প্রথম প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয় দ্বিতীয় দফা ডিপিপিতে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ব্যয়ও। কিন্তু নতুন সময়সূচি অনুযায়ীও শেষ করা যায়নি এ প্রকল্পের কাজ। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হলেও বিভিন্ন সময় নানা সমস্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। এখনো ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ বাকি। এ কারণেই নতুন করে আরও এক বছর সময় চেয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাড়তি সময় চেয়ে সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে নতুন করে চতুর্থ দফায় ডিপিপি পাঠানো হয়েছে, যাতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে। এই সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে খরচও বাড়ছে এ প্রকল্পে। যদি সময় বাড়ানো-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত ডিপিপি একনেক থেকে অনুমোদন পায়, তাহলে এ প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা, যাতে প্রকল্পের সর্বমোট ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে তিন হাজার ৭৯০ কোটি টাকায়। সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে তিন হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের পরিচালক ইবনে হাসান আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে পরিমাণ রাস্তার কাজ বাকি, তা দুই মাসেই শেষ করা সম্ভব। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে সময় লাগছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি অর্থবছরই, অর্থাৎ আগামী জুন মাসের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ১৯২ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের কাজের ইতিমধ্যে ১৬২ কিলোমিটার শেষ হয়ে গেছে।  এখন কাজে বাধা হয়ে আছে মাত্র ৩০ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে ফেনী থেকে চট্টগ্রামের দিকে যেতে দুই কিলোমিটার এবং দাউদকান্দি থেকে ফেনী পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ২৮ কিলোমিটার সড়ক এখনো পাকা করা বাকি।

এ ছাড়া কুমিল্লার পদুয়া বাজারে রেলওয়ে ওভারপাস, ফেনীর ফতেহপুরে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজের জন্য এবং কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কাজ বাকি থাকায় প্রায়ই এ তিন স্পটে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। এক-দেড় মাসের মধ্যেই ক্যান্টনমেন্ট এলাকার যানজট সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা বলছেন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না। বারবার আশ্বাস দিলেও প্রতিবারই সেটি ফেল করছে। এখন আর যাত্রীরা আশ্বাস চান না, তারা প্রকল্পের শেষ দেখতে চান।

 

 

সর্বশেষ খবর