বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াবে সরকার

টেকনাফ হচ্ছে বর্ডার ইকোনমিক জোন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চোরাচালান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে তরুণ যুবাদের দূরে রাখতে সীমান্ত এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হবে সীমান্তে। এসব অর্থনৈতিক জোনে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই মূলত সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সীমান্তে কর্মসংস্থান বাড়লে ওই এলাকায় বসবাসরতদের আয় বৃদ্ধি পাবে। সেখানে বসবাসরত তরুণ-যুবারা বৈধভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারলে অবৈধ কার্যক্রম কমে যাবে। বিশেষ করে মাদক, মানব পাচার, চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, সীমান্তে ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্প্রতি একটি বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ে। সংশ্লিষ্ট কার‌্যালয়ের মহাপরিচালক শেখ ইউসুফ হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে বর্ডার ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) প্রতিনিধি সম্ভাব্য দুটি স্থানের (উখিয়া ও টেকনাফ) ভূমির প্রকৃতি ও মালিকানা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন। মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানির সম্ভাব্যতা এবং এলাকাবাসীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিকে ওই এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আকর্ষণীয় দিক হিসেবে তুলে ধরে বেজা। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এ ধরনের অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সীমান্ত এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে এলাকার মানুষের আয় বৃদ্ধি করতে পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে। এর ফলে চোরাচালানসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী ঘটনাও হ্রাস পাবে বলে মতামত দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। তবে সীমান্তে ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা হলে বিনিয়োগকারীরা ওই এলাকায় বিনিয়োগ করবেন কি না সে বিষয়টি পর‌্যালোচনার প্রয়োজন বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকার সংবেদনশীলতার বিষয়টি পর‌্যালোচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিবেচনার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ইকোনমিক জোনের প্রভাব এবং মিয়ানমারের সঙ্গে জ্বালানি ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতার প্রকৃত সম্ভাব্যতা যাচাই করার ব্যাপারেও মতামত দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ের মহাপরিচালক শেখ ইউসুফ হারুন বৈঠকের কার্যবিবরণীতে জানান, সীমান্তে ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ টেকনাফ-উখিয়ায় বর্ডার ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে জ্বালানিসহ অন্যান্য ইস্যুতে সহযোগিতার সম্ভাবনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; প্রস্তাবিত দুই এলাকার (উখিয়া, টেকনাফ) যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবেশ, ভূমির প্রকৃতি ও মালিকানা সম্পর্কে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রকৃতি (মূল্য ও পণ্য), পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ ধরনের বর্ডার ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার পর এলাকাবাসীর ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে বেজাকেও একটি প্রতিবেদন দিতে হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর