বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জমি কেনার টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে মধ্যযুগীয় নির‌্যাতন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

জমি কেনার টাকা না পেয়ে কুষ্টিয়ার এক কলেজছাত্রী স্ত্রীর ওপর অমানুষিক নির‌্যাতন চালিয়েছেন তার প্রকৌশলী স্বামী। সারা শরীর দগদগে ক্ষত নিয়ে তাসনুবা রেজা (১৯) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত তাসনুবা শহরের ইসলামিয়া কলেজের এএইচসি পরীক্ষার্থী, শহরের আমলাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সোহেল রেজার মেয়ে।

তাসনুবা জানান, দেড় বছর আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের লাহরি খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। লাহরি খান বর্তমানে নওগাঁ পিডিবির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। বিয়ের        সময় তাসনুবার পরিবার জামাতাকে ৫ লাখ টাকা দেন। পরে নওগাঁয় ৩ কাঠা জমি কিনতে লাহরি টাকার জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে প্রায়ই অত্যাচার করা হতো। সর্বশেষ গত ২৩ অক্টোবর রাতে নওগাঁ শহরের দয়ালের মোড় এলাকার ভাড়া বাসায় স্বামী লাহরি খান ও তার বাড়ির মালিক বিদ্যুৎ হোসেন মিলে লোহার পাইপ, মোটরসাইকেলে ব্যবহƒত লম্বা লগ তালা ও টেস্টার দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার ওপর নির‌্যাতন চালান। তাসনুবার মা লুৎফুন্নাহার জানান, ২৩ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে জামাতার মোবাইলে কল করলে তাকে বলেন আপনারা এসে মেয়েকে নিয়ে যান। পরে রাতে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নওগাঁ যান। পরে থানায় গিয়ে দেখেন তাসনুবা ক্ষত-বিক্ষত শরীরে মেঝেতে পড়ে আছেন। একপর‌্যায়ে পুলিশ সাদা কাগজ ও তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে তাদের থানা থেকে বের করে দেয়। হাসপাতালে নিতে চাইলে স্থানীয় যুবকরা তাদের বাধা দেয়। পরে ভোর রাতে একটি মাইক্রো ভাড়া করে কুষ্টিয়া এসে জেনারেল হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করান। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার পাল জানান, তাসনুবা নামের যে মেয়েটি ভর্তি আছে তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে তাকে মারপিট করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো বস্তু দিয়ে শরীরে খোঁচানো হয়েছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় মেয়েটির ওপর নির‌্যাতন করা হয়েছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। তাসনুবা অভিযোগ করে বলেন, আমার বাড়ির লোকজনকে নওগাঁ থানায় জিম্মি করে রাখা হয়। থানার ওসি ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে সাদা কাগজ ও তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে নেন। স্বাক্ষর দেব না জানালে ওসি বলেন, ‘খারাপ মামলায় কোর্টে চালান দিয়ে দেব।’ এদিকে নওগাঁ থানা পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ না নেওয়ায় কুষ্টিয়া আদালতে একটি মামলা দায়েরের চেষ্টা করছে তাসনুবার পরিবার। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে লাহরি খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, স্ত্রীকে আমি কোনো নির‌্যাতন করিনি। থানা থেকে সুস্থ মেয়েকে তারা মুচলেকা দিয়ে নিয়ে গেছে। থানা থেকে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। ওসির সঙ্গে কথা বললে সব জানতে পারবেন। তিনি আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর