শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবকাঠামো ও চিকিৎসক সংকটে নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল

আলপনা বেগম, নেত্রকোনা

অবকাঠামো ও চিকিৎসক সংকটে নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের নাম আধুনিক হলেও বাস্তবে এখনো মান্ধাতা আমলের। জেলার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তা রয়েছে শুধু কাগজে কলমে। এখনো চলছে ৫০ শয্যার জনবল আর অবকাঠামো দিয়ে। অথচ দিন দিন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তার ওপর রয়েছে চিকিৎসক সংকটসহ নানা জটিলতা। ফলে প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভেঙে শহরের জয়নগরে ৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল স্থাপিত হয়। ২০০৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের মঞ্জুরি আদেশ গৃহীত হয়। এরপর ২০০৫ সালে দরপত্র আহ্বান হলে ৫ কোটি ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯০ টাকায় ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য ২০০৫ সালের ২৭ জুন সাইট হস্তান্তর হয়। ২০০৭ সালে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সবকিছু অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। পরে যৌথবাহিনী নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বললে তারা কাজটি দ্রুত শেষ করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করলেও তা এভাবেই পড়ে থাকে। এ ছাড়াও হাসপাতালে এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি জরুরি নিরাপত্তা প্রহরী, ক্যাশিয়ার, পরিসংখ্যান, নাইটগার্ড, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ডবয় ও আয়ার পদ। জোড়াতালি দিয়েই চলছে এসব পদের কার্যক্রম। হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি সচল। সেটিও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। সে কারণে সরকারি সুবিধা ভোগ করার সুযোগ থাকে না সাধারণের। বিশুদ্ধ পানি আর টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে দুটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে একটি বিকল হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ইমারজেন্সি বিভাগের টেলিফোন থাকলেও তা নষ্ট প্রায় তিন বছর। হাসপাতালে ২২ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও ৫টি রয়েছে শূন্য। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ পদ ৪টি। ১৭ জনের মধ্যে মহিলা ডাক্তার মাত্র তিনজন। তিন বছর ধরে নাক কান গলা বিভাগের কনসালট্যান্ট পদটি খালি। সুপারভাইজারসহ নার্সের ৩৫টি পদ থাকলেও এখনো ৪টি শূন্য। ৫টি সহকারী নার্সের পদের মধ্যে ৪টি শূন্য। সুইপার সংকটও রয়েছে। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হয় না ঠিকমতো। নোংরা পরিবেশ থেকেই যায়। ওষুধ পর্যাপ্ত নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী হয় ইমারজেন্সি ও আউটডোরে। তারা ভালো চিকিৎসাসেবা দিতে চাইলেও নানা জটিলতায় রোগীদের চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। হাসপাতালে নাই নাই অবস্থার পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। আর এ সবকিছুর জন্য প্রায়ই রোগীদের সঙ্গে ডাক্তারদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তবে কিছু সমস্যা দূর করতে সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে সিসিটিভি ক্যামেরা, কাউন্টার, রোগী অপেক্ষমাণদের বসার সংক্ষিপ্ত স্থান, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুটি বেড বরাদ্দ এবং ইউনিসেফের সহায়তায় শিশুদের জন্য বেস্ট ফিডিংয়েরও স্থান করে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাসপাতাল ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের মধ্যে শুধু খাদ্যে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া সবকিছুই ৫০ শয্যার রয়ে গেছে। অতিসত্বর হাসপাতালের অবকাঠামোসহ জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আবশ্যক। সিভিল সার্জন ডা. বিজনকান্তি সরকার বলেন, সমস্যা দূর করতে আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে আসছি। এর মধ্যেই অসমাপ্ত অবকাঠামো সংকট নিরসনে সাড়ে ৭ কোটি টাকার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর