শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জাতীয় পরিচয়পত্র বিড়ম্বনায় নতুন ভোটাররা

পিছিয়ে গেল স্মার্টকার্ড প্রকল্পের কাজও

গোলাম রাব্বানী

২০১৪ ও ২০১৫ সালের হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন ভোটারের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় বিভিন্ন কাজে পরিচয়পত্র বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা। এসব নতুন ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও যথাসময়ে তা দিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। এমনকি দীর্ঘদিনেও তাদের কাগুজে জাতীয় পরিচয়পত্রও দেয়নি নির্বাচন কমিশন। ফলে এক কোটি ভোটারের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় সেবা সংক্রান্ত নানা কাজে তাদের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড বিতরণ সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে সব নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। কবে থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু করা হবে তাও জানাতে পারছে না ইসি। নির্বাচন কমিশনের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড প্রদান ও বিতরণ সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে দিয়ে মেয়াদ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শফিকুল ইসলাম পড়েন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভোটার হয়েছেন ২০১৪ সালে। এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। নির্বাচন কমিশনের থানা অফিস থেকে বলা হয়েছেÑ নতুন ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। সেই আশায় আছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অনেক সেবাও নিতে পারছেন না তিনি। বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একটি মোবাইল সিম কিনে ব্যবহার করছেন কিন্তু সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য তার নিজের পরিচয়পত্র নম্বর চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইসির অফিসে একাধিকবার গিয়েও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় কোনো ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারছেন না এই শিক্ষার্থী। ঢাকা কমার্স কলেজের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবু তাহের মুহাম্মদ মছিহসহ এমন অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় প্রতিনিয়ত নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানান প্রতিবেদককে। অন্যদিকে শহর-গ্রাম-গঞ্জের মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্রের অভাবে মেয়ের বিয়ে থেকে শুরু করে জমি রেজিস্ট্রিসহ অনেক কাজ করতে পারছেন না। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ২০১৪ সালে হালনাগাদে ৪৭ লাখ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের হালনাগাদ এখনো চলমান। ইতিমধ্যে ৪৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০৫ নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন তাদের ছবি তোলা ও নিবন্ধনের কাজ চলছে। এসব ভোটারের মাঝে বিদ্যমান ন্যাশনাল আইডি কার্ড বিতরণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান সাইফুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ইসি সচিবালয় বাস্তবায়নাধীন ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস-আইডিইএ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ব্যয় বাড়ানো ছাড়াই ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত (১৮ মাস) বাড়ানো হলো। বিদ্যমান প্রকল্পটির আওতায় আগামী জুনের মধ্যে সাড়ে নয় কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। উৎপাদন শুরুর কথা ছিল আগস্টেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, স্মার্টকার্ড দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। কবে নাগাদ বিতরণ শুরু হবে সুনির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া যাবে না। সিইসি জানিয়েছেন, প্রায় এক কোটি নতুন ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এদের সবার জন্যই এনআইডি নম্বর দেওয়া হবে, যেটা ব্যবহার করে জরুরি কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তবে বিতরণ কাজের সুবিধায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানান প্রকল্প পরিচালক। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের এই মহাপরিচালক ইতিমধ্যে বলেছেন, স্মার্টকার্ড তৈরির কার্যক্রমও শিগগিরই শুরু হবে। মেয়াদ বাড়লে বিতরণের সময়ও পাব বেশি। স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের কাজটিও ভালোভাবে করা যাবে। অন্যদিকে কাগুজে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী ৯ কোটিরও বেশি ভোটারের পরিচয়পত্র সংশোধনের সুযোগ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিবালয়। সবার হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার অংশ হিসেবে এসব ভোটারের তথ্য সংশোধনে আজ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল ইসি। তবে ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, পরবর্তীতেও পরিচয়পত্রের সংশোধনের সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের আগ্রহে ১৮ বছরের কম বয়সী নাগরিকদের এবারই প্রথমবারের মতো তথ্য সংগ্রহ করে ইসি। তবে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া না গেলেও ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৫ জন নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়।

সর্বশেষ খবর