শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কক্সবাজার সৈকতজুড়ে নোংরা আবর্জনা

নিজামুল হক বিপুল, কক্সবাজার থেকে ফিরে

বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সাগরকন্যা কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম এই সি-বিচে বছরজুড়েই থাকে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি। কক্সবাজার সি-বিচের লাবণী পয়েন্ট থেকে শুরু করে একেবারে উখিয়া-টেকনাফ পর্যন্ত সি-বিচজুড়ে পর্যটকরা ঘুরে বেড়ান আপন মনে। কিন্তু দেশি-বিদেশি এই পর্যটকদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে বিচজুড়ে পড়ে থাকা পলিব্যাগ, বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের প্যাকেট, ডাবের খোসা, আইসক্রিমের প্যাকেটসহ নোংরা আবর্জনা। সৈকত দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসন এবং বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও বিচের আবর্জনা অপসারণের কোনো তৎপরতা নেই। সরেজমিন সি-বিচের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পুরো বিচজুড়েই আছে ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। এসব আবর্জনাই জোয়ার-ভাটার সময় সাগরের পানিতে ভাসতে থাকে। কোনো কোনো আবর্জনা আবার পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরে গোসল বা øানে নামা পর্যটকদের হাতে পায়ে বাঁধে এসব আবর্জনা।

পৃথিবীর দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বালুকাময়। কিন্তু পর্যটকদের কাছে টেনে নেওয়া মায়াবী এই সমুদ্র সৈকতটি নোংরা-আবর্জনার কারণে হারাচ্ছে তার আকর্ষণ ও জৌলুস। তারপরও পর্যটকরা বার বার সাগরের টানে ছুটে গেলেও এটিকে পরিচ্ছন্ন একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত করে তুলতে কোনো রকম উদ্যোগই দেখা যায় না। অথচ সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা বলেছেন, পর্যটনকে শিল্প হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কক্সবাজারের দীর্ঘ সি-বিচ নিয়ে সরকার নানা রকম পরিকল্পনা নিলে এখান থেকেই বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আদায় সম্ভব। এর প্রথম শর্তই হচ্ছে কক্সবাজার সি-বিচকে একটি পরিচ্ছন্ন ও পর্যটনবান্ধন বিচ হিসেবে গড়ে তোলা। পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও নির্ঝঞ্জাট একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলে এখনকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটককে কাছে টানতে পারবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতটি। সরেজমিন দেখা গেছে, পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রকম উদ্যোগ পুরো বিচে থাকলেও নেই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। পর্যটন করপোরেশন ও স্থানীয় সি-বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি থাকলেও তাদের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে কক্সবাজার সি-বিচের তিনটি পয়েন্ট ছাড়াও হিমছড়ি ও ইনানী বিচে পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা যায়। পর্যটকরা জানান, কক্সবাজারের তুলনায় হিমছড়ি ও ইনানী বিচের পরিবেশ অনেক ভালো। এই দুই বিচে নোংরা আবর্জনার পরিমাণ কম। তাই এখন থেকেই এ দুটি বিচের প্রতি যত্ন নিলে পর্যটকরা সেদিকেই বেশি ঝুঁকবেন। শাব্বির আহমদ নামের একজন বলেন, সমুদ্র আমাদের এত কিছু দিচ্ছে, অথচ আমরা তার প্রতি কোনো সুনজর দিচ্ছি না। এই অবস্থা চলতে থাকলে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকবে। আনিস রহমান নামে এক পর্যটক জানান, এখন অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় এবার আবর্জনার পরিমাণ বেশ কম চোখে পড়েছে। তবে পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে। তাহলেই বিচকে পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে। অপর একজন পর্যটক আলমগীর হোসেন বলেন, এই সি-বিচ আমাদের সোনার খনি। অথচ আমরা এর কদর দিচ্ছি না। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এ রকম বিচ থাকলেও তারা শুধু ওই একটি জায়গা থেকেই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করত। কক্সবাজার সি-বিচের নোংরা আবর্জনার বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সোমবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সি-বিচ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা আছে তারা সঠিকভাবে সেটি দেখভাল না করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ২০১৬ সালে পর্যটন বর্ষকে সামনে রেখে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে তিন দিনব্যাপী কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হবে। তখনই বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর