সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেলের হর্ন আতঙ্ক

আনা হচ্ছে থাইল্যান্ড থেকে সংযোজন হয় বংশালে

জিন্নাতুন নূর

রাজধানীর একটি স্বনামধন্য বালিকা বিদ্যালয় থেকে স্কুল শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে প্রায় দিনই আতঙ্কে থাকতে হয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুপাকে (ছদ্মনাম)। বাড়ি ফেরার পথে প্রায়ই তিন-চারটি মোটরসাইকেলে করে একদল উচ্ছৃঙ্খল তরুণ রুপা ও তার সহপাঠীদের পিছু নেয়। এ সময় সেই বখাটেরা বিকট শব্দে কখনো হিন্দি গান আবার কখনো জীবজন্তুর আওয়াজ বাজায়। রুপার ভাষ্য, হঠাৎ দেখলে মনে হবে হয়তো মাইকে গান বাজানো হচ্ছে কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করে দেখা যায় যে, মোটরসাইকেলের নিচের সিটে বিশেষ কায়দায় লাগানো যন্ত্র থেকে গান বাজছে।

সম্প্র্রতি রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার উঠতি তরুণ মোটরসাইকেল চালক, যারা হিন্দি গান, জীবজন্তুর বিকট শব্দ বা ভিআইপি সাইরেনসহ বাইক চালিয়ে শব্দদূষণ করে তাদের সঙ্গে কথা হয়। তাদেরই একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এ ধরনের শব্দ করলে আলাদা মনোযোগ তৈরি করা যায়। পথে চলতি অবস্থায় ভয়ে অনেকে সাইড দিয়ে দেয়। আর গান শুনে গাড়ি চালালে নিজেকে ‘স্মার্ট’ মনে হয়। ঢাকায় মোটরসাইকেল চালানোর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থাইল্যান্ড থেকে যে মোটরসাইকেলগুলো আনা হচ্ছে সেগুলোয় সাউন্ড হল্যার থাকায় চালানোর সময় ইঞ্জিনের উচ্চ শব্দ তৈরি হয়। এ ছাড়া বংশাল ও পুরান ঢাকায় মোটরসাইকেল মেকানিকদের অনেকেই থাইল্যান্ড থেকে পশু-পাখির বিকট ডাকের হর্ন নিয়ে আসেন। আর তরুণদের অনেকেই এ হর্ন লাগাতে বংশালে মেকারের দোকানে লাইন দেয়। এ ছাড়া আজকাল ঢাকার রাস্তায় প্রায়ই ভিআইপিদের চলাচলের সময় ব্যবহৃত সাইরেনও মোটরসাইকেলের হর্ন হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। আর মোটরসাইকেলের বুম বক্সে সিটের নিচে মেমোরি কার্ড, মোবাইলের ব্লু টুথ বা ইউএসবি ডিভাইসের মাধ্যমে তরুণ বাইকারদের অনেকেই উচ্চ শব্দে গান বাজাচ্ছে। ‘বিডি বাইক’ নামক একটি ব্লগিং সাইটের কর্মকর্তা পারভেজ ইমদাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা ভিআইপিদের হর্ন বা সাইরেন বাইকে ব্যবহার করছেন তারা অবৈধ কাজ করছেন। সাধারণত শিক্ষিত ও চাকরিজীবী বাইক চালকরা এ ধরনের কাজ করেন না। তবে পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলাসহ বিভিন্ন এলাকার টিনএজাররা বাইকে উদ্ভট আওয়াজ বা হর্ন ব্যবহার করে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবহুল স্থানে অপ্রাসঙ্গিক আওয়াজ যেমন কুকুরের ডাক, পাখির ডাক ও ভিনদেশি গান বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আইন অমান্য করে অহরহ ঢাকায় বিকট শব্দসহ চালকরা বাইক চালাচ্ছে। অথচ এ ধরনের বিকট শব্দের কারণে একদিকে যেমন শব্দদূষণ হচ্ছে অন্যদিকে মেয়েরা ইভ টিজিংয়েরও শিকার হচ্ছে। তাদের মনে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। লক্ষ্য করে দেখা যায়, বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে, কোচিং সেন্টারের সামনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা যেখানে একত্রিত হন সেখানে কিংবা মার্কেটের সামনে এ উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা বাইক চালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। এ ছাড়া রাজধানীর হাতির ঝিল, গুলশান, বনানী, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় গভীর রাতে যুবকরা বাইক রেসিং করার সময় বিকট শব্দের এ হর্ন বাজায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোচিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রায়ই বখাটে কিছু ছেলে বাইক চালিয়ে আমার ও সহপাঠীদের পিছু নেয়। বাড়ির কাছাকাছি চলে এলেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে উচ্চ শব্দে অনেকটা কুকুরের আওয়াজের মতো শব্দ বাজায়। আমরা সে সময় খুব আতঙ্কে থাকি।’ কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকদের বিষয়টি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে দেখা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার পর ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে থাকে না। এরপর কেউ উচ্চ শব্দে গাড়ি চালালে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে তা বের করা সম্ভব নয়। আর যদি কেউ ধরা পড়ে তবে টহল পুলিশের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে মোটরযান আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তাদের মতে, মাত্র ৫০০ বা ১ হাজার টাকার জরিমানা অনেকেই গায়ে লাগান না। এ জন্য মোটরযান আইনে সাজার পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর