সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পাটমন্ত্রীকে চিঠি

বিজেএমসির বিলুপ্তি চান অর্থমন্ত্রী মুহিত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবার খক্ষহস্ত হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) ওপর। তিনি পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিককে গত সপ্তাহে লেখা এক চিঠিতে বিজেএমসিকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাটমন্ত্রীর কাছে লেখা ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী স্বাক্ষর করেন ২৮ অক্টোবর।

বিজেএমসির ওপর অর্থমন্ত্রীর ক্ষোভের কারণ হচ্ছে ‘আলীম জুট মিলস’। ওই মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জগলুল মাহমুদ ২৫ অক্টোবর অর্থমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন, ‘বিজেএমসির কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা আলীম জুট মিলের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ স্বার্থ হাসিল করছেন, যাতে আমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ২০০৯ সালে পাট মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ মিলটি একবার হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত হয়, তখন মিলটির দায়দেনা ছিল ১৩২ কোটি টাকার ওপরে। বর্তমানে তা ১৮৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। দিন দিন এই দেনা বাড়ছে। ...কিন্তু এখন অবধি মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের (অ্যাপিলেট ডিভিশন) রায় মোতাবেক মিলটি সরেজিমন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।’ আলীম জুট মিলের এমডির কাছ থেকে এ ধরনের নালিশ পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী পাটমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখেন, ...‘আমার ধারণা, মিলগুলো প্রায় সবই ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হয় এবং বিজেএমসি সেখানে একটি সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। যেসব সরকারি মিল আপনাদের কাছে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে সেখানেও বলা হয়েছে, এগুলো পিপিপি পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে পারে। তাই বলা যেতে পারে, যতগুলো মিল আপনাদের কাছে হস্তান্তর হয়েছে তার সবগুলোই ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে।’ পরের অনুচ্ছেদে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘এই বাস্তবতার নিরিখে আমি বিজেএমসির কোনো ভূমিকাই দেখতে পাই না। অথচ তারা (বিজেএমসি) সব মিলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের (মিল মালিকদের) সময়মতো পাট খরিদ করতে দেয় না। এ ধরনের কার্যাবলি দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করে এবং নানাভাবে মিলগুলোকে লাভজনক হতে দেয় না।’ এরপরই বিজেএমসির ওপর তোপ দেগে পাটমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘আপনি দেখবেন যে, বিজেএমসির কারণেই মিলটির দায়দেনা যখন মিলটি পুনরায় চালু হতে পারল না তখন ৫৪ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, বিজেএমসিকে বিলুপ্ত করা দরকার এবং মন্ত্রণালয়ে একটি ছোট সেল ব্যক্তিমালিকানা পদ্ধতিতে পরিচালিত মিলগুলোর পর্যবেক্ষণ, পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করতে পারে। প্রত্যর্পিত প্রতিটি মিলই ব্যক্তিমালিকানা খাতের পদ্ধতিতেই পরিচালিত হবে বলেই তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে।’ অর্থমন্ত্রী পাট মন্ত্রণালয়ের দক্ষতার দিকে ইঙ্গিত করে আলীম জুট মিল প্রত্যর্পণের কেসটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে পাটমন্ত্রীকে বলেন, ‘সেখানে মন্ত্রণালয়ের দক্ষতার প্রমাণ হবে প্রথমত কত জলদি আপনারা প্রত্যর্পণপর্ব সম্পন্ন করতে পারেন। দ্বিতীয়ত আপনার কীভাবে মিলটিকে স্বাধীনভাবে পরিচালনার সুযোগ দেবেন। তারা কি তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট যে সময় প্রয়োজন সে সময় তাদের পছন্দমতো দামে পছন্দমতো মানের পণ্য খরিদ করতে পারবে? তাদের মেশিনারির সংস্কার তারা কি প্রয়োজনমতো সময়ে করতে পারবে? তাদের প্রয়োজনীয় জনবল তারা কি নিযুক্ত করতে পারবে? তারা কি তাদের উৎপাদিত পণ্য তাদের দায়িত্বে, তাদের নির্দিষ্ট দামে বিক্রয় করতে পারবে? এই সব কাজ তারা যদি নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে পারে. তাহলেই তার লোকসানে আপনাকে ভর্তুকি দিতে হবে না এবং তাকে লাভজনক করতে আপনি দাবি করতে পারবেন।’ ‘আমি অধীর আগ্রহে আপনার কার্যক্রমের ফলাফল দেখতে পাব বলে অপেক্ষায় রইলাম’ উল্লেখ করে পাটমন্ত্রীকে লেখা তার চিঠি শেষ করেন অর্থমন্ত্রী। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিককে ফোন দেওয়া হলেও তার সেলফোনের সংযোগ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর