বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আধিপত্যে বেপরোয়া চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ

সংঘর্ষে আসামি ২৩৫

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

আধিপত্যে বেপরোয়া চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) হল উদ্বোধন অনুষ্ঠানের টেলি-কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চবি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে উপাচার্য পরিচয় করিয়ে দেন ‘মেধাবী শিক্ষার্থী’ হিসেবে। ঠিক পরদিনই এ দুই নেতার গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আহত হন অর্ধ শতাধিক। অভিযানে চবি থেকে উদ্ধার হয় বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। একই দিন সংঘর্ষের পর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। শুধু চবি ও চুয়েটের অস্থিরতাই নয়, চট্টগ্রামে রেলওয়ের টেন্ডারবাজি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাবর-লিমন গ্রুপে বিরোধ-সংঘর্ষ চলছে। পরীক্ষার হলে ঢুকে শিক্ষক ও ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত করেছেন ছাত্রলীগ নেতা। নগরজুড়ে বিলবোর্ড-ফুটপাথ দখল-বেদখলের লড়াই তো রয়েছেই। আছে চট্টগ্রাম বন্দর আর বিপিসির নানা ব্যবসায়িক ভাগ-বাটোয়ারার দ্ব›দ্ব। ফলে দফায় দফায় সংঘর্ষ অঘটন-অস্থিরতা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বিষয়টিকে ‘এলার্মিং’ উল্লেখ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নামধারীদের এই সন্ত্রাস বন্ধে জিরো টলারেন্সে রয়েছে পুলিশ। সিআরবিতে সংঘর্ষকারীদের একজনের চেহারায়ও ছাত্রত্বের লক্ষণ নেই। পুলিশ ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।’  ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ প্রশ্নে বিস্ময় ও উদ্বেগ জানান চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই সংঘর্ষকারীরা আসলেই কি ছাত্রলীগ? ওদের পেছনে আসলে কারা? ওরা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে করা। কারও ব্যক্তিগত অঘটনের দায় ছাত্রলীগ বহন করবে না। সিআরবিতে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই। সেখানে সাবেক কোনো ছাত্রনেতার অনুসারীরা জড়িত থাকতে পারেন। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ চবি ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, ‘এ সংঘর্ষ বড় কোনো ঘটনা নয়। পুলিশই লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস শেল এবং রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে।’ পুলিশের বিরুদ্ধে হলে ঢুকে লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগ এনে তিনি আরও বলেন, ‘উদ্ধার অস্ত্র ছাত্রলীগের নয়।’ চবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন মামলায় আসামি ২৩৫ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এসব মামলা করা হয়। এসব মামলায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিন উপপরিদর্শক বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন। গতকাল দুপুরে এ মামলাগুলো দায়ের করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার ওসি মো. ইসমাইল।

এর আগে সোমবার সংঘর্ষ চলাকালে আটক হওয়া ৩৯ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হেলাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন বলেন, কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে শোডাউন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হল ও শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে দুটি শটগান, একটি পিস্তলসহ বিপুল দা-কিরিচ ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করে পুলিশ।

 

 

সর্বশেষ খবর