বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

একদিনেই পৌর নির্বাচন

ডিসেম্বরে ভোট, তফসিল আগামী সপ্তাহে

গোলাম রাব্বানী

একদিনেই পৌর নির্বাচন

আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে একদিনে সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচন করার জন্য জোর প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। এ ক্ষেত্রে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলেছেন, ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য দুটি তারিখ সামনে রেখে ইসি সচিবালয় কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে ২০-২৪ ডিসেম্বর ও ২৭-৩১ ডিসেম্বর- এ দিনগুলোর মধ্য থেকে ‘ভোটের দিন’ স্থির করা হতে পারে।

এদিকে ডিসেম্বরের শেষে নির্বাচন করতে ৩ নভেম্বর পৌরসভা আইনের সংশোধনীর পরে মাত্র এক দিনের মধ্যে দ্রুত নির্বাচনী বিধিমালা-আচরণবিধি সংশোধনীর কাজও শেষ করেছে ইসি। গতকাল প্রয়োজনীয় বিধিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। তবে মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনের সংখ্যা কমতে পারে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী গতকাল বলেছেন, ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করতে পারলে কমিশনের পক্ষে ভালো হবে। সব কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হলে আগামী সপ্তাহেই তফসিলও ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে তফসিল দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

এক দিনে পৌরসভা নির্বাচন : নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী মনে করেন, ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করতে পারলে কমিশনের পক্ষে ভালো হবে। সব কাজ শেষ হলে আগামী সপ্তাহেই তফসিলও ঘোষণা করা যেতে পারে। এ ছাড়া এক দিনেই ২৪৫ পৌরসভায় নির্বাচন করার কথাও জানান তিনি। গতকাল ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। জাবেদ আলী বলেন, ব্যক্তিগত ধারণা, আমরা চাইব ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি নির্বাচন করতে পারি তবে আমার মনে হয় যে কমিশনের পক্ষে ভালো হয়। কেননা, জানুয়ারির ২ তারিখ থেকে ভোটার তালিকা রিভাইজিংয়ের কাজ চলবে। ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। তাই ডিসেম্বরেই নির্বাচন করতে হবে। এতে কোনো কেন্দ্র স্থগিত হলেও ডিসেম্বরেই পুনর্নির্বাচন করা যাবে।

তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের আইন সংশোধনের অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় আমরা বিধিমালা সংশোধন করছি। বিধিমালা ভেটিং হয়ে এলেই নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক করতে পারব। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর ৩৭-৩৮ দিনের কম সময় থাকলে ‘টাইট’ হয়ে যায়। আমরা চাইব প্রার্থীরা যেন তিন সপ্তাহ প্রচার করতে পারেন। এসব চিন্তা-ভাবনা করে দেখেছি ৪০-৪২ দিন সময় থাকা দরকার। সামনের সপ্তাহে তফসিল হতে পারে যদি আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়। নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভায় এক দিনে ভোট করা বা ধাপে ধাপে ভোট করার বিষয়টিসহ ভোটের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মেয়রের লাগবে ৪০০ ভোটারের স্বাক্ষর : প্রতি পৌরসভায় একটি রাজনৈতিক দলের ১ লাখ টাকা করে ব্যয়ের সুযোগ রেখে পৌরসভা নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনার এ-সংক্রান্ত খসড়া অনুমোদন দিয়েছেন। আজ তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। এ বিধিমালা কার্যকর হলে পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে মেয়র পদে ৪০০ অথবা ১০০ এবং কাউন্সিলর পদে ৫০ অথবা ৩০ জন ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে নির্বাচন বিধিমালা, আচরণ বিধিমালা ও সমর্থন যাচাই বিধিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে ইসি। এই প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকারের পৌরসভা নির্বাচন হতে যাচ্ছে দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে। সে অনুযায়ী দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন, দলীয় ব্যয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংশোধনী আনা হচ্ছে এ বিধিমালায়। ইসির এক কর্মকর্তা জানান, প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় বিদ্যমান বিধিমালায় ঠিক করে দেওয়া আছে। এবার দলভিত্তিক ভোট হবে বলে দলীয় নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। কোনো নিবন্ধিত দল পৌর নির্বাচনে মেয়র বা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিলে সব মিলিয়ে প্রতি পৌরসভায় ১ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে পারবে না। কোনো দল ভোটের খরচ মেটাতে অনুদান নিলে ২০ হাজার টাকার বেশি চেক নিতে পারবে না। দলের ক্ষেত্রে এসব বিধি লঙ্ঘন হলে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আসছে ডিসেম্বরে দেশের তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে আড়াই শ’ পৌর এলাকায় ভোট আয়োজন করবে ইসি। বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় দুটো বিষয় বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে প্রার্থী শুধু নিজের ছবি পোস্টারে ছাপাতে পারতেন, এখন দলীয় প্রধানের ছবিও দিতে পারবেন। স্বতন্ত্রদের জন্য জাতীয় নির্বাচনের মতো ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর দেওয়ার বিধান থাকছে না। তবে কিছুসংখ্যক ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দেওয়ার বিধান থাকছে। তবে সহনীয় সংখ্যা থাকবে। এ ছাড়া যারা আগে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের ভোটারের স্বাক্ষর লাগবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর