শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রচারে হেলিকপ্টার নিতে পারবেন দলীয় প্রধানরা

গোলাম রাব্বানী

প্রচারে হেলিকপ্টার নিতে পারবেন দলীয় প্রধানরা

প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারের (সুবিধাভোগী) গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানদের হেলিকপ্টার ব্যবহারের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এমনকি প্রার্থীদের সরকারি ডাকবাংলো, রেস্ট হাউস ও সার্কিট হাউস প্রথম আবেদনের ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের পক্ষে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারলেও দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হলে বাকিদের প্রার্থিতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। গতকাল ইসির পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো নির্বাচনী আচরণবিধিমালায় এসব বিষয় দেখা গেছে। তবে আইন মন্ত্রণালয় এসব বিষয় কিছুটা কাটছাঁটও করতে পারে।

অন্যদিকে পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় মন্ত্রী-এমপিদের অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখার কঠোর সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মন্ত্রী-এমপিরা প্রচারণায় থাকলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো তাদের পক্ষে কঠিন হবে। প্রশাসনমন্ত্রী এমপিদের কথা শুনবে, না কি সাধারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কথা শুনবে?

এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে আচরণবিধিতে সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তির প্রচারণায় অংশগ্রহণের বিষয়ে সংশোধন আনছে ইসি। যদিও বলা হচ্ছে-দশম সংসদ নির্বাচনের মতোই সরকারের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিরা সরকারি সুবিধা ছেড়ে প্রচারণা করতে পারবেন। এ ছাড়া আচরণবিধিতে বলা হয়েছে-‘নির্বাচনী প্রচার কার্যে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাইবে না তবে দলীয় প্রধানের যাতায়াতের জন্য উহা ব্যবহার করিতে পারিবে। কিন্তু যাতায়াতের সময় হেলিকপ্টার হতে লিফলেট, ব্যানার বা অন্য কোনো প্রচার সামগ্রী প্রদর্শন বা বিতরণ করিতে পারিবে না।’ স্থানীয় সরকার পৌরসভা নির্বাচন আচরণ বিধিমালার সংশোধন নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। তিনি বলেছেন, সরকারি সুবিধা ছেড়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন-খসড়া বিধিতে এ সুপারিশ করেছি আমরা।

সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বোঝানো হয়েছে। দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানে অধ্যাদেশ জারির পর নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালায় সংশোধনে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সংশোধিত বিধিমালা জারি করবে ইসি। বিদ্যমান আইনে স্থানীয় সরকারে মন্ত্রী-এমপি, মেয়রদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হওয়ায় সংসদ নির্বাচনের মতোই আচরণবিধি করা হচ্ছে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার। মনোনয়নের বিষয়ে শাহনেওয়াজ বলেন, দলগুলো প্রথমে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেবে। তারপর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে বলে দেবে, কে তাদের প্রার্থী। এতে বাকিগুলোর প্রার্থিতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। তিনি বলেন, যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন (পৌরসভার) আইন সংশোধনের নতুন অধ্যাদেশ হয়েছে, সেই আলোকেই বিধি তৈরির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে তা ভেটিং হয়ে এলেই বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এরপরই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করব। শাহনেওয়াজ বলেন, ডিসেম্বরের শেষে নির্বাচন করব।

কঠোর সমালোচনা : নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত আচরণ বিধি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন করতে এখন ইসি কিছু যুক্তি দাঁড় করাবে। কিন্তু কোনোভাবেই মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত নয় পৌরসভায়। এ বিধি কার্যকর হলে নির্বাচন প্রভাবিত করার আর কিছু বাকি থাকবে না। পৌর নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে না বলে মনে করেন অনেকে। প্রচারণার সুযোগ  পেলেই কেউ প্রটোকল নেবে, প্রটেকশন নেবে। কিন্তু তাদের প্রভাবের কাছে অন্য প্রার্থীরা তো কোনো সুযোগই পাবে না। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে না এ ভোটেও।

 

সর্বশেষ খবর