শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেশ ক্রমেই সংকটের দিকে যাচ্ছে : খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘দেশ ক্রমেই গভীর সংকটের দিকে এগোচ্ছে। চারদিকে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ গোটা জাতিকে আজ গ্রাস করেছে। সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা করে সরকার দেশের সব বিরুদ্ধমতকে দমনে আজ বেপরোয়া। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির অসুস্থ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে আমি বিস্মিত ও উৎকণ্ঠিত। এটি তার জীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলেছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেলে যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর গতকাল এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন বেগম জিয়া। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বিবৃতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে জেলে পাঠানোর ঘটনায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপিপ্রধান। খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পর তাকে ফের কারাগারে পাঠানোয় আমি বিস্মিত। একজন অসুস্থ রাজনীতিককে এভাবে কারাগারে পাঠানো সরকারের চরম অমানবিক ও অসহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া কিছু নয়।’ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৪ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারটিও নির্ধারিত ছিল। কারাগারে মির্জা ফখরুলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাই স্বাভাবিক। সরকার জেনে-বুঝে একজন অসুস্থ মানুষকে আবারও কারাগারে প্রেরণ করে তার জীবনের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলেছে।’

গয়েশ্বর রায়কে কারাগারে পাঠানোর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন, ‘দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এভাবে একের পর এক কারাগারে বন্দী রাখার মধ্য দিয়ে সরকারের দুরভিসন্ধি রয়েছে। আমরা সারা দেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাউন্সিল করে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর পরপরই সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের দমন-পীড়ন থেকে দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারাও বাদ পড়ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার নেতা-কর্মী মামলা, চার্জশিট, কারাজীবন আর সরকারের দমননীতির শিকারে পরিণত হয়েছেন। জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে তথাকথিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আজ সরকার জনগণের কাঁধের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। নিজেদের অপশাসনকে প্রলম্বিত করার আকাক্সক্ষায় দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’ এ পরিস্থিতি দেশ-জনগণ-গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। অবিলম্বে মির্জা আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন বেগম জিয়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু বিএনপিই নয়, নাগরিক সমাজ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও সমালোচনা করায় সরকার ক্ষুব্ধ। সরকারের রোষানলের বাইরে গণমাধ্যমও নয়। যারাই অপশাসন, দুঃশাসন, দুর্নীতির সমালোচনা করছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধেও খক্ষহস্ত।’ বেগম জিয়া বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সংকট উত্তরণে গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রকে সংকোচন না করে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে আসবে। দেশ ও জাতির স্বার্থে একটি জাতীয় সংলাপের সূচনার পরিবেশ উন্মুক্ত করবে।’

বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার, গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা, বিচারব্যবস্থায় স্বাধীনতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া, প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা, আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য জরুরি।’ এ ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেফতার সব রাজবন্দীকে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর