শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিয়ে না করেও যৌতুকের মামলায় ধুঁকছে যুবক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিয়ে না করেও ‘স্ত্রী’র দায়ের করা যৌতুকের মামলায় ফেঁসে গেছেন আশিকুর রহমান নামের এক যুবক। গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। কারাভোগও করতে হয়েছে। সুমাইয়া আক্তার নামে এক নারী এ মামলা করেন। অথচ বিয়ে তো দূরের কথা বাদী সুমাইয়ার সঙ্গে তার কোনো পরিচয়ও       নেই। সেই নারী গত ১ অক্টোবর ঢাকার ৮ নম্বর মহানগর হাকিম আদালতে যৌতুক আইনে ওই মামলা করেন। ওইদিনই আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় ৪ অক্টোবর আশিকুরকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। বর্তমানে জামিনে আছেন আশিকুর। ২৭ অক্টোবর আদালতে ফের হাজিরা দিয়েছেন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর আবারও হাজিরার তারিখ পড়েছে। গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আদালত থেকে কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এলে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সত্যাসত্য যাচাই করার সুযোগ আমাদের নেই।’

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরানা ধার্যে সুমাইয়ার বিয়ে হয়েছে। উপঢৌকন হিসেবে আশিকুরকে ৩ লাখ টাকার সরঞ্জাম দেওয়া হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে খরচ হয় ১ লাখ টাকা। বিয়ের দু-তিন মাস পর আশিকুর বিদেশে যাওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। না দেওয়ায় তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর আশিকুর সুমাইয়াকে মারধর করেন। এর পর থেকে সুমাইয়া তার ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছেন বলে মামলায় অভিযোগ করেন। মামলায় সুমাইয়ার যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে তাতে বাবার নাম দেওয়া আছে নুরুল হক, মায়ের নাম তারা বেগম। ঠিকানা গ্রাম ও পোস্ট নবীনগর, থানা আশুলিয়া, জেলা ঢাকা। মামলার নথিতে নবীনগর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি পরিচয়পত্রও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আশুলিয়া ও সাভার থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর নামে ওই এলাকায় কোনো ইউনিয়নই নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মো. আবদুল হাসিম নামের এক ব্যক্তির স্বাক্ষর আছে তারও কোনো অস্তিত্ব নেই। মামলায় কাবিননামার যে কপি দেওয়া আছে তাতে কাজী অফিসেরও কোনো ঠিকানা নেই। এ ব্যাপারে আশিকুরের বাবা মোসাদ্দেকুর রহমান জানান, মামলায় আশিকুরের স্থায়ী ঠিকানা ও নিকাহনামায় আশিকুরের মায়ের নাম ভুল। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে কোনো প্রতারক চক্র ফাঁদে ফেলেছে।’ আশিকুর জানান, তিনি কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তার দাবি, সুমাইয়া আক্তার নামের কোনো মেয়েকে চেনেন না। বিয়ে তো দূরের কথা। সম্প্রতি কোনো কোনো মোবাইল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে মামলা মিটমাট করারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আতঙ্কে আছেন বলে জানান। এ ব্যাপারে আশিকুরের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রতারণার মতলবে এ মামলা করা হয়েছে। তিনি আদালতকে এ ব্যাপারে জানিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আদালত সংশ্লিষ্ট (সাভার) থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর