শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অরক্ষিত কুড়িল ফ্লাইওভার

গর্ত খানাখন্দে বেহাল নিচে আবর্জনার ভাগাড়

বিশেষ প্রতিনিধি

অরক্ষিত কুড়িল ফ্লাইওভার

কুড়িল ফ্লাইওভারে ওঠার মুখেই গর্ত খানাখন্দ, নিচে আবর্জনার ভাগাড় -জয়ীতা রায়

উদ্বোধনের দুই বছরের মধ্যেই বিশাল গর্ত ও খানাখন্দে বেহাল হয়ে পড়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কুড়িল ফ্লাইওভার। পাশাপাশি পরিচর্যাহীন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে পরিণত হয়েছে ফ্লাইওভার এলাকাটি। ফ্লাইওভারের খিলক্ষেত প্রান্তে যানবাহন ওঠার প্রবেশমুখেই ফ্লাইওভারের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। অযত্ম আর অবহেলায় অরক্ষিত নগরীর ব্যস্ত এই ফ্লাইওভারটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যানবাহনের চালকসহ যাত্রীরা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশন কুড়িল মোড়, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির সংযোগস্থলে নির্মাণ করা বহুল আকাক্সিক্ষত এই ফ্লাইওভারটি ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর পরপরই এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন দশমিক এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করে। এটি নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও বাংলাদেশের প্রজেক্ট বিল্ডার্স লি. (পিবিএল)। ফ্লাইওভারটি নির্মাণের ফলে কুড়িল এলাকায় বিমানবন্দর সড়কের রেলক্রসিংয়ের ভয়াবহ যানজট দূর হয়। কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই কোনো তদারকি নেই ফ্লাইওভারটির। গত মে-জুনে বর্ষার সময় ফ্লাইওভারের খিলক্ষেত প্রান্তে বড় বড় গর্ত হয়ে হাঁটুপানি জমে যায়। এ সময় এই অংশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয় এবং অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হয়। ফ্লাইওভারের এই অংশটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা স্থায়ী করা যায়নি। ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী যাত্রাবাড়ী-গাজীপুর রুটের অনাবিল পরিবহনের এক চালক বলেন, ফ্লাইওভারে ওঠার সময় আতঙ্কে থাকি। কখন গাড়ির এক্সেল ভেঙে যায়। তিনি বলেন, গত এপ্রিল থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার অংশটা গর্ত হয়ে আছে। একটা জায়গা আট মাসেও মেরামত করা গেল না। আমরা কোন দেশে বাস করি?

এদিকে ফ্লাইওভারের বিভিন্ন অংশে বিটুমিন উঠে ছোট-বড় অনেক গর্ত তৈরি হয়েছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ফ্লাইওভারটি দিন দিনই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যানবাহন চালকরা বলেছেন, দ্রুত পর্যাপ্ত মেরামত না করলে ফ্লাইওভারটি অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। এদিকে কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকাটি এখন নোংরা-আবর্জনা, পূতিগন্ধের জঞ্জালময় জায়গায় পরিণত হয়েছে। ফ্লাইওভারের নিচে কোনায় কোনায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। উৎকট দুর্গন্ধে এলাকার বাতাস পর্যন্ত ভারি হয়ে থাকে। এখন ফ্লাইওভার অতিক্রমকালে দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে গাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকে না। যাত্রীরা নাকে-মুখে রুমাল চেপে অতি কষ্টে জায়গাটি পেরোতে বাধ্য হন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কুড়িল ও খিলক্ষেতসহ আশপাশ এলাকার যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা নিয়ে ফ্লাইওভারের নিচে নানা স্থানে ফেলছে। সে ময়লা-আবর্জনা কাক-কুকুরের দল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আরও হতশ্রী পরিবেশের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ফ্লাইওভারটি নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখার কোনো উদ্যোগ নেই দীর্ঘদিন ধরে। ফ্লাইওভারের নিচের অংশে গড়ে উঠেছে বাস-ট্রাক, প্রাইভেট কারের অঘোষিত টার্মিনাল। সরকারি জায়গা, ব্যস্ততম রাস্তা ও রেলক্রসিংজুড়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য দোকানপাট, ঝুপড়ি বস্তির নানা স্থাপনা। সন্ধ্যার পর অপরাধীদের আখড়ায় পরিণত হয় পুরো এলাকাটি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় সেখানে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সন্ধ্যা পেরোতেই বখাটে, সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্যে কুড়িল ভীতিকর এলাকায় পরিণত হয়। শুধু ময়লা-আবর্জনা, দুর্গন্ধই নয়-হাজারো জঞ্জালে বড়ই বেহাল হয়ে আছে কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকা। পর্যাপ্ত আলো না থাকায় ভুতুড়ে অন্ধকারে নানা অপকর্ম সংঘটিত হয়। গত ২৫ অক্টোবর কুড়িল বিশ্বরোডে ছিনতাইকারীর গাড়িচাপায় অনন্ত বিশ্বাস (২৮) নামে এক রিকশাচালক নিহত হন। তিনি ভোরে গাইবান্ধার বাস থেকে কুড়িল বিশ্বরোডে নামেন। ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি প্রাইভেট কারে থাকা ছিনতাইকারী তার স্ত্রীর গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় অনন্ত এগিয়ে এলে ছিনতাইকারীরা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। পরে প্রাইভেট কার চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

 

 

সর্বশেষ খবর