শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রচারে মন্ত্রী-এমপিদের সুযোগে সমালোচনার মুখে ইসি

গোলাম রাব্বানী

প্রচারে মন্ত্রী-এমপিদের সুযোগে সমালোচনার মুখে ইসি

প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মন্ত্রী-এমপিদের অংশ নেওয়ার সুযোগদানের প্রস্তাবকে ‘অন্যায় প্রস্তাব’ বলে অভিহিত করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগদান করাটা হবে গণতন্ত্রের জন্য অস্বাস্থ্যকর। নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব দেয়- দশম সংসদ নির্বাচনের মতোই সরকারের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিরা সরকারি সুবিধা ছেড়ে  পৌর নির্বাচনে দল মনোনীত বা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন। নির্বাচনী আচরণবিধিতে এমন বিধান রাখার কঠোর সমালোচনা করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচন কমিশন কার স্বার্থে এমন বিধান করল? ইসি কি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়? না কি কাউকে বিশেষ সুবিধা দিতে চায়?

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন- মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি সুবিধা ছেড়ে নির্বাচনী এলাকায় গেলেও নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি হবে। তারা প্রচারণায় থাকলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা করা কঠিন হবে। কেননা প্রশাসন মন্ত্রী-এমপিদের কথা শুনবে, না কি সাধারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কথা শুনবে এমন প্রশ্নও রাখেন অনেকে।

এমন বিধান করায় নির্বাচন কমিশনের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক এক নির্বাচন কমিশনার। এ প্রস্তাবকে ‘অন্যায়’ আখ্যায়িত করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, এ ধরনের বিধি হলে নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারাবে। ক্ষমতাসীনরাই সব সময় সুবিধা পাবে। সব ঠিক থাকলে আসছে ডিসেম্বরে দেশের তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে আড়াইশ পৌর এলাকায় ভোট আয়োজন করবে ইসি। এ নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে ইতিমধ্যে আইন সংশোধন করে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের বিধিমালা সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। প্রস্তাব পাঠানোর আগের বুধবার বিকাল পর্যন্ত ইসির খসড়া আচরণবিধিতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর আগে হঠাৎ করে রাতে (বুধবার) এমন বিধান যুক্ত করায় একজন নির্বাচন কমিশনারও এর কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। 

ইসির প্রস্তাব অনুযায়ী বিধিমালা সংশোধন করা হলে এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিরাও পৌর নির্বাচনে মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। কেবল এই কাজে তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ‘প্রাপ্যতা অনুযায়ী’ তারা নিরাপত্তা পাবেন। সরকারি সুবিধা ব্যবহার না করলেও পদে থাকার কারণেই এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। তারা বলছেন, এ বিধিমালাই চূড়ান্ত হলে মাঠপর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের তা প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, এটা একটা অন্যায় আচরণবিধি হচ্ছে। মন্ত্রী-এমপি-মেয়রকে স্থানীয় নির্বাচনের প্রচার থেকে বিরত রাখাই বাঞ্ছনীয়। তাদের সুযোগ দিলে সব সময় ক্ষমতাসীন দল সুবিধা পাবে। ২০০৭-১২ মেয়াদে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করা ছহুল হোসাইন বলেন, মন্ত্রী মর্যাদার পদবি নিয়ে কেউ পৌর এলাকায় প্রচারে গেলে বিপক্ষ প্রার্থীর অস্তিত্ব কোথায় যাবে! এ ধরনের বিধি হলে নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারাবে। বর্তমান ইসির এ উদ্যোগে আমি আহত। কমিশনে কেউ কি এর বিরোধিতা করেননি? ইসির এ প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ভোটে প্রভাব ফেলতে সরকারের আর কিছু ‘বাকি রইল না’। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদারও এ বিধানের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কার স্বার্থে কাজ করছে। তারা কি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়? তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনেও তো এমন বিধান ছিল না। তারা কেন হঠাৎ করে এমন বিধান করল? এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও যদি মন্ত্রী-এমপিরা পৌর নির্বাচনের প্রচারে নামেন তাতেও নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি হবে। প্রশাসনের ওপরও প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, এমন বিধান থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা, দুরাশায় পরিণত হবে।

 

সর্বশেষ খবর