শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নভেম্বরেই পানি শূন্য তিস্তা

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

নভেম্বরেই পানি শূন্য তিস্তা

তিস্তার বুক চিরে পার হচ্ছে এখন ট্রাক্টর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তিস্তা যেন এখন আর কোনো নদী নয়, একটি মরা খাল। ভারতের গজলডোবার প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারাজ নির্মাণ করে এ নদীর গতি রোধ করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার বুক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে পানি। মরে গেছে তিস্তা। এ নদীর পাড়ে দাঁড়ালে এখন বাতাসে শুনতে পাওয়া যায় ক্ষীণকায় তিস্তার দীর্ঘশ্বাস আর গুমরে ওঠা কান্নার শব্দ। দীর্ঘ এ তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই ধু-ধু বালুচর। প্রতিদিনই পানির ক্রমহ্রাসে আশা-নিরাশা ও লুকোচুরির কবলে পড়েছে একসময়ের প্রমত্তা তিস্তা। তিস্তার নাব্য এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে, আসন্ন রবি মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। প্রতিদিনই পানি কমছে। কোথাও সামান্য পানি আবার কোথাও দিগন্তজোড়া বালুচর। ব্যারাজ থেকে শুরু করে তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পানি না থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক। তারা বলছেন, বার বার দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে পানিপ্রবাহের বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় ব্যারাজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা ব্যারাজ এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে,              নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তিস্তার পানিপ্রবাহ সর্বনিন্ম পর্যায়ে নেমে এসেছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে যেখানে প্রয়োজন ৪ হাজার কিউসেক পানি, সেখানে বর্ষা শেষ না হতেই ব্যারাজ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র আড়াই হাজার কিউসেক। পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম ভেঙে পড়বে। এক মাস পরই সেচনির্ভর ইরি-বোরো ও রবি আবাদের কার্যক্রম শুরু হবে। কৃষকের মতে, বোরো রোপণ থেকে গাছের শীষ হেলে না পড়া পর্যন্ত সেচ প্রদানের মুখ্য সময়। বোরো আবাদের জন্য সেচ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সেচের আওতাভুক্ত এলাকার কৃষক তিস্তার সেচকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। ৩১ অক্টোবর তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১২০০ কিউসেক। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যারাজে পানির প্রয়োজন প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পে কর্তব্যরত ডালিয়া পাউবোর ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান জানান, তিস্তা ব্যারাজের সেচের পানি দিয়ে আসন্ন বোরো আবাদের জন্য লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্র মতে, সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ন্যূনতম পানির প্রয়োজন প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। তিস্তার উজানে বিজনবিভূঁই এলাকায় গজলডোবা নামক ব্যারাজ নির্মাণ করে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের গত বছরের এক জরিপে জানা যায়, সর্বসাকল্যে তিস্তাতে পানি পাওয়া যায় ১ অক্টোবর ৪ হাজার ৮৮৪, ২০ অক্টোবর ৪ হাজার ৩০৫ এবং সর্বশেষ ২ নভেম্বর ব্যারাজের মূল গেটের পানিপ্রবাহ ছিল মাত্র ১ হাজার কিউসেক। ওই প্রকৌশলী জানান, পর্যাপ্ত পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম কোনোভাবেই চালু করা সম্ভব হবে না। ভরা বর্ষায় ব্যারাজ এলাকায় যেখানে পানি থাকার কথা ৩০ হাজার কিউসেক সেখানে বর্ষা শেষ না হতেই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে ব্যারাজ এলাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের সেচ কার্যক্রম চালাতে তিস্তায় পানির প্রয়োজন হবে শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। কারণ দ্বিতীয় পর্যায়ের সেচ ক্যানেল বগুড়া পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তিনটি ইউনিটে ভাগ করে এর কাজ চলছে। প্রথম ইউনিটের কাজ চলছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হবে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ও বিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত। তৃতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হবে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হয়ে বগুড়ার ধুনট পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর