শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

বিপর্যয়ের মুখে কাঁসাশিল্প

শফিক জামান, জামালপুর

বিপর্যয়ের মুখে কাঁসাশিল্প

এক সময় বাঙালি সমাজে কাঁসার তৈজসপত্র ছিল সংসারের জন্য একটি অনিবার্য অনুষজ্ঞ। মোগল সম্রাটের অন্দর মহলেও ছিল এর কদর। আর ভারত উপমহাদেশে এ কাঁসাশিল্পের সুতিকাগার ছিল জামালপুরের  ইসলামপুর উপজেলার কাঁসারী পল্লী। অসংখ্য পরিবার জড়িয়ে ছিল এ শিল্পের সঙ্গে। কিন্তু নানা সংকট আর সমস্যায় ইতিমধ্যেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন অনেকে। একটি সময় ছিল ঝকঝকে, তকতকে কাঁসার বাসন-কোসন ছাড়া কোনো বাঙালির ঘর-সংসার কল্পনা করা যেত না। গ্রামীণ বিয়ে-সাদী, খেলাধূলায় কাঁসার কলস আর বাসন ছিল উপহারের প্রথম পছন্দ। কাঁসার বাসন ছাড়া পূজার আয়োজনও ছিল অসম্ভব একটি বিষয়। মোগল আমল থেকেই ভারতে ছিল কাঁসার কদর। সে সময়ই জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায়  কাসারী পল্লীতে গড়ে উঠে কাঁসাশিল্প। অসংখ্য পরিবার জড়িয়ে ছিল এ শিল্পের সঙ্গে। এখানকার উন্নতমানের কাঁসার বাসন-কোসনের কদর ছিল মোগল আর ব্রিটিশ রাজ পরিবারেও। সময়ের বিবর্তনে সেই কাঁসাশিল্পের  জৈলুস এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সীসা, মেলামাইন, প্লাস্টিক, সিরামিক আর কাচের তৈজসপত্রের ভিড়ে এখন কাঁসার প্রচলন ততটা না থাকলেও সৌন্দর্য প্রিয় মানুষ আর সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে এখনো কাঁসার তৈজসপত্রের কদর রয়েছে আগের মতই। দেশে-বিদেশে এখনো কাসার বাসন-কোসনের বিপুল চাহিদা রয়েছে। অনেক পরিবার বংশ পরম্পরায় এ শিল্পকে আকড়ে ছিল। কিন্তু পুঁজির অভাব, কারিগর সংকট, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতায় কোনোভাবে টিকে থাকা ঐতিহ্যবাহী কাঁসাশিল্প পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে।  সংশ্লিষ্ট কাঁসাশিল্পীদের বক্তব্য, কাঁসার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত তামা আর রাং এর দুষ্প্রাপ্যতা এ শিল্পকে সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। তামা দেশে কমবেশি পাওয়া গেলেও রাং আমদানি করতে হয় মালয়েশিয়া থেকে। এছাড়া বেড়েছে কয়লার দামও। এসব কারণে টিকে থাকতে পারছে না কাসারী পরিবার। একই কারণে তৈরি হচ্ছে না নতুন কারিগরও। ফলে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেক কাসারী পরিবার। ইসলামপুরের কাসারী পল্লীতে সর্বশেষ কোনো রকমে টিকে আছে ১০টি কাঁসা কারখানা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকার যদি সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, শুল্কমুক্ত রাং আমদানির উদ্যোগ নেয়। তবেই ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকে থাকার পাশাপাশি শিল্পের পুনর্জাগরণের সম্ভাবনাও থাকবে।

সর্বশেষ খবর