রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দিল্লি বৈঠকে ঢাকার ৬ দফা

প্রতি টন ট্রানজিটে ১৯২ টাকা লাগবে ভারতের সারসংক্ষেপ যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধায় ভারতকে পণ্য নিতে হলে প্রতি টন পণ্যের জন্য ১৯২ টাকা মাশুল দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা সারসংক্ষেপে তিনটি সংস্থার পক্ষে সমন্বিত এ ট্রানজিট মাশুলের প্রস্তাব করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পাবে প্রতি মেট্রিক টনে ১৩০ টাকা (এসকর্ট দিলে প্রতি মেট্রিক টনে আরও ৫০ টাকা যোগ হবে), বিআইডব্লিউটিএ পাবে প্রতি মেট্রিক টনে ১০ টাকা এবং আশুগঞ্জ থেকে আগরতলা পর্যন্ত সড়কপথে ৫১ কিলোমিটার পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাবে ৫২ টাকা (প্রতি মেট্রিক টন কিলোমিটারে এক টাকা দুই পয়সা হারে)। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রানজিট ইস্যুতে আলোচনার জন্য ছয়টি বিষয় চূড়ান্ত করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এসব ইস্যুতে আলোচনা হবে। এর আগে অনুমোদনের জন্য এ সারসংক্ষেপ পাঠানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

প্রস্তাবিত ইস্যুগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ-ভারতের নৌ প্রটোকল অনুযায়ী  ট্রানজিট মাশুল নির্ধারণ, দুই দেশের মধ্যে উপক‚লীয় জাহাজ চলাচলের পরিচালন পদ্ধতি চূড়ান্তকরণ, ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল এবং মেরিটাইম-সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়।

গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে সই হয় সংশোধিত ‘ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি)’ প্রটোকল। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের বিষয়েও একটি সমঝোতা স্মারক সই হয় ভারতের সঙ্গে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধায় পণ্য পরিবহনে ১৬ সেপ্টেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি (জেটিসি)। বৈঠকে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে এনবিআরের পক্ষ থেকে প্রতি মেট্রিক টনে ১৩০ টাকা মাশুল দাবি করা হয়। এর মধ্যে নথি প্রক্রিয়াকরণে ১০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট বাবদ ২০ টাকা ও নিরাপত্তা বাবদ ১০০ টাকা- এই মোট ১৩০ টাকা টনপ্রতি চার্জ আরোপের কথা বলা হয়। এ ছাড়া পণ্যের প্রহরা (এসকর্ট) বাবদ আরও ৫০ টাকা দাবি করে এনবিআর। নৌ প্রটোকল অনুযায়ী জলপথ ছাড়াও আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়কপথে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় পণ্য পরিবহনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন এক কিলোমিটার দূরত্বের জন্য টনপ্রতি এক টাকা দুই পয়সা মাশুল দাবি করেছে। সে ক্ষেত্রে ওই ৫১ কিলোমিটার সড়কপথে প্রতি টন পণ্যের জন্য ৫২ টাকা মাশুল দিতে হবে ভারতকে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ নৌ প্রটোকলের আওতায় নতুন করে টনপ্রতি ১০ টাকা কার্যবেক্ষণ চার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছে। তবে এর বাইরে ভারতের পণ্য পরিবহনে আরও কয়েক ধরনের মাশুল পাবে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নৌ পরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহনে যাতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়, আমাদের পক্ষ থেকে সে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, প্রস্তাবিত মাশুল ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফি ও সার্ভিস চার্জ রয়েছে, যা থেকে বিপুল পরিমাণ আয় হবে দেশের। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ প্রতি যাত্রায় নৌযান প্রবেশ ফি দুই হাজার ৫০০ টাকা, প্রতি বিটে পাইলটেজ চার্জ ৩০০ টাকা (আংটিহারা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সাতটি বিট রয়েছে), জাহাজের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিবছর প্রতি টনে সংরক্ষণ (কনজারভেন্সি) বাবদ ৭৩ টাকা, আশুগঞ্জে বার্থিং বাবদ ২৫০ টাকা, শ্রমিক হ্যান্ডলিংয়ে টনপ্রতি ৪০ ও ল্যান্ডিং শিপিং চার্জ বাবদ ৩০ টাকা আদায় করবে। প্রটোকল রুটে দুটি ক্যানেল রয়েছে। ওই দুটি ক্যানেলে পণ্য পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত ১০ টাকা আদায় করা হবে। এর মধ্যে মংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানেলের জন্য ছয় টাকা এবং গাবখান ক্যানেলের জন্য আরও চার টাকা চার্জ আদায় করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া অপারেটরদের লাইসেন্স ফি বাবদ বছরে ২০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে বিআইডব্লিউটিএ। সেগুলোও বহাল থাকবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর