রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নেই চিকিৎসক নেই সেবা, ভবন বাড়ছে নীলফামারী হাসপাতালে

আবদুল বারী, নীলফামারী

নেই চিকিৎসক নেই সেবা, ভবন বাড়ছে নীলফামারী হাসপাতালে

বেহাল দশা নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল।

অথচ ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবলেই রয়েছে ঘাটতি। এর পরও ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। এভাবেই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে শুধু অবকাঠামোর উন্নতির কাজ চললেও স্বল্প জনবলের কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকলেও রয়েছে পর্যাপ্ত ওষুধ ও অবকাঠামোগত সব সুযোগ-সুবিধা। এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। টিকিট মিললেও রোগীরা খুঁজে পান না চিকিৎসক। এভাবে হাসপাতালে এসেও চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ফিরে যেতে হয় রোগীকে। আবার চিকিৎসকের দেখা মিললেও রোগীরা পান না পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা।

নীলফামারী শহরের শাহীপাড়া এলাকার উত্তম কুমার তরফদার অভিযোগ করে বলেন, শনিবার পাঁচ বছর বয়সী অসুস্থ ছেলে নীরকে নিয়ে হাসপাতালে যান তিনি। টিকিট কেটে চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে যান মেয়ের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু তিনি চিকিৎসা না দিয়ে উল্টো ক্ষিপ্ত হন। এদিকে এই স্বল্প চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসকদের ডেপুটেশনে আনা হয়েছে। এতে তৈরি হয়েছে উভয় সংকট। তাদের তুলে আনায় পল্লি এলাকার রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নীলফামারী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৮৫ সালে সাড়ে সাত একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় ৫০ শয্যার হাসপাতাল। পর্যায়ক্রমে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

প্রতিদিন বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। এদিকে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে পুরুষ, মহিলা, শিশু ও গাইনি ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন দেড়শ রোগী। শয্যা-স্বল্পতার কারণে প্রতিদিনই মেঝে থেকে শুরু করে বারান্দায় কষ্ট করে রোগীদের থাকতে হয়। একদিকে রোগের যন্ত্রণা অন্যদিকে অন্তর্বিভাগে উৎকট গন্ধ রোগীদের বিষিয়ে তুলেছে। এর পরও রোগমুক্ত হতে তারা এভাবেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে দন্ত, গাইনি, শিশু, মেডিসিন, সার্জারি, নাক-কান-গলা, চক্ষুসহ বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, সার্জারি, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, শিশু, ইএনটিসহ ২১ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন ১১ জন। সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্সসহ ৩৫ জনের মধ্যে শূন্য আছে আটটি পদ। আর এই শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।

নার্সিং সুপারভাইজার কল্পনা রানী দাস বলেন, হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, পুরুষ ওয়ার্ড, মহিলা, গাইনি, শিশু, চক্ষু, নবজাতক ওয়ার্ড, লেবার রুম, জেনারেল ওটি, চক্ষু ওটি, এএনসি, ডাইরিয়া ওয়ার্ডসহ ১৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ড চলছে মাত্র ২৭ জন নার্স দিয়ে। ১০০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশ রোগী ভর্তি থাকেন।

চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. আবদুর রশিদ বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে ১০০ শয্যার কাজ চালানো হচ্ছে। ৫০ শয্যার হাসপাতালের যে চিকিৎসক ও জনবল, এখানে তাও দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল চালাতে গিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসকদের ডেপুটেশনে আনা হয়েছে। পাশাপাশি গোটা জেলায় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর