সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোর লেন

৯৫ ভাগ কাজ শেষ, যে কোনো সময় উদ্বোধন

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

দৃশ্যমান ঢাকা-ময়মনসিংহ ফোর লেন

জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৮৭ কিলোমিটার যাতায়াত করতে এখন লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। ব্যস্ততম এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করায় এই সুবিধা ভোগ করছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরসহ অত্র অঞ্চলের লাখো মানুষ। যাত্রীবাহী বাস বা নিজস্ব কোনো পরিবহন দিয়ে এ সময়ের মধ্যে অনায়াসে পৌঁছা যাচ্ছে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ কিংবা ময়মনসিংহ থেকে জয়দেবপুর। আর এটি এখন স্বপ্ন নয় বা কাগজে-কলমে নয়। এখন সত্যি সত্যি এক ঘণ্টায় আসা-যাওয়া সম্ভব হচ্ছে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ। আর এ সুবিধা পেয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের লাখো মানুষ এখন খুশিতে আত্বাহারা। এ যেন রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। এখন আর থাকছে না কোনো দুর্বিষহ যানজট বা যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। রাস্তায় কোনো ট্রাফিক জ্যাম ছাড়া এত অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছা যাচ্ছে গন্তব্যস্থলে। এমনটাই বললেন জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের পরিচালক হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ যানজটের এক দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলেন। ইতিমধ্যে এর সুবিধা পাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ মাত্র ৮৭ কিলোমিটার। আর এই ৮৭ কিলোমিটার যেতে কী অসহনীয় অবস্থায় পড়তে হতো তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। জায়গায় জায়গায় পার্কিং, যাত্রী ওঠানো-নামানো, দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকা অনেক কিছুই ছিল। ময়মনসিংহ থেকে জয়দেবপুর আসতে দিন পেরিয়ে যেত। আর সেই দুর্বিষহ যানজটের অবসান ঘটিয়ে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেনের কাজ এখন শেষ পর‌্যায়ে। বাকি শুধু উদ্বোধনের। যে কোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার লেনের এই মহাসড়কটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। শুধু ভালুকা এলাকায় অল্প একটু রাস্তায় এখনো কাজ চলছে। বাকি সব কাজই শেষ। চার লেনের কাজ শেষ হওয়ায় সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শুধু প্রস্তুত বলা ঠিক হবে না। কারণ রাস্তা দিয়ে এখন দেদারছে চলছে যানবাহন। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। মহাসড়কের কাজ শেষ পর‌্যায়ে থাকায় জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় ও জ্বালানি দুটোই কম লাগছে। যানজট না থাকায় জ্বালানি ও সময় বাঁচিয়ে যাতায়াত করতে পেরে খুশি যাত্রী, পরিবহন ব্যবসায়ী ও চালকরা। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর চার লেনের কাজ আরও দ্রুতগতিতে চলে। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের জুলাইয়ে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের সময় এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯৯২ কোটি টাকা। আর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালের জুন মাস। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে বেড়ে যায় ব্যয়ও। সর্বশেষ এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। আর কাজ শেষ হওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয় ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত। ইতিমধ্যে মহাসড়কের ডিভাইডার এলাকায় নিরাপত্তা পিলার স্থাপন, ঘাস লাগানো, রোড মার্কিংসহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের পরিচালক হাফিজুর রহমান রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকার জনসাধারণের সুবিধার জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। আর উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের কাজটি অন্যতম। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগই কাজ শেষ। ইতিমধ্যে এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার সাধারণ মানুষের যাতায়াতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আর এ চিত্র মহাসড়কে চলাচল করলে বাস্তবেই দেখা যায়। ময়মনসিংহ থেকে জয়দেবপুর বা ঢাকায় যেতে যেখানে সময় লাগত থেকে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা, এখন লাগছে মাত্র এক ঘণ্টা। এতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ থেকে অনেকটাই মুক্তি পেল। অন্যদিকে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। আর এই নজরদারির কারণেই দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশের একটি বড় প্রকল্প। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার লেন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে মোট চারটি প্যাকেজে কাজ বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জয়দেবপুর থেকে মাওনার নয়নপুর পর্যন্ত দুটি প্যাকেজ এবং নয়নপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত দুটি প্যাকেজ। জয়দেবপুর থেকে মাওনার নয়নপুর পর্যন্ত দুটি প্যাকেজ বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ দুই প্যাকেজের রাস্তা হচ্ছে ৩০ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। জয়দেবপুর থেকে নয়নপুর পর্যন্ত দুটি প্যাকেজের তত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট থাকায় কাজ সম্পন্ন হয় দ্রুতগতিতে। বাকি দুই প্যাকেজের রাস্তা হচ্ছে ৫৬ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার। আর এ দুই প্যাকেজের রাস্তার তত্বাবধানে রয়েছে সওজ। সওজ সূত্র জানায়, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এই ৮৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাঁচটি সেতু, একটি উড়াল সড়ক, একটি রেলওয়ে ওভারপাস বর্ধিতকরণ, চারটি স্টিল ওভারব্রিজ ও ১৫০টি বক্স কালভার্ট রয়েছে। মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় যানজট নিরসনে একটি উড়াল সড়ক নির্মাণও এ প্রকল্পের কাজ বলে জানায় একটি সূত্র। আর এ উড়াল সড়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলে তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চার লেন নির্মাণকাজ শেষ পর‌্যায়ে। শুধু ভালুকা এলাকার আট কিলোমিটার সড়কের দুই লেনের কাজ চলছে। অপর দুই লেন দিয়ে চলছে যানবাহন। নির্মাণকাজের দায়িত্বে ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের নির্বাহী পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ জানান, যতটুকু কাজ বাকি আছে তা শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই, এ সরকার আর যা কিছু দিক আর না দিক, আমাদের ময়মনসিংহবাসীকে একটি রাস্তা দিয়েছে। এখন এক ঘণ্টায়ই বাড়ি যেতে পারি। এবার ঈদের সময় ভাই মনে হয়েছে, যেন বিমানে বাড়ি গেছি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার আমাদের একটি বিভাগও দিয়েছে। এ জন্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’ ঢাকাগামী সৌখিন পরিবহনের চালক খলিলুর রহমান বলেন, ‘যে রাস্তা হয়েছে, এখন ঢাকায় যেতে খুব একটা সময় লাগবে না। অল্প সময়েই আমরা ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় চলাচল করতে পারব।’ ময়মনসিংহগামী নিরাপদ পরিবহনের চালক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আগে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে জাগায় জাগায় যানজটে পড়তে হতো। এখন আর এটা নেই। শুধু জয়দেবপুর চৌরাস্তায় একটু জ্যাম লাগে।’ বাঘের বাজার গ্রামের পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ জানান, এত দিন পরিবহন ব্যবসায় লোকসান হতো। এখন তেমন আর লোকসান হচ্ছে না। কারণ ভাঙাচোরা রাস্তা নেই। তাই গাড়ির চাকা ক্ষয় হচ্ছে কম। জ্বালানিও সাশ্রয় হচ্ছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করে বর্তমান সরকারের মেয়াদে পদ্মা সেতু, বিআরটিসি বাস সার্ভিস, জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়ক প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজসহ গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প সমাপ্ত হলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। তিনি বলেন, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ায় অত্র অঞ্চলের জনসাধারণ খুব অল্প সময়েই তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারবেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর