সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শোলায় একাত্তরের ভাস্কর্যপল্লী

মোস্তফা মতিহার

শোলায় একাত্তরের ভাস্কর্যপল্লী

’৭১-এর বর্বরতার ভাস্কর্যপল্লী’ নামে একটি ভাস্কর্যপল্লী নির্মাণের কাজ চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ উদ্যোগটি নিয়েছেন দেশপ্রেমিক শিল্পী মিণ্টু দে। একাত্তরের বর্বরতার সাক্ষী হিসেবে এ ভাস্কর্যপল্লীতে থাকছে ককশিট বা শোলা দিয়ে নির্মিত ১ হাজার ৭১টি প্রতীকী লাশ, ২৫০টি ছোট ঘর, ৪টি গণকবর; কাক, কুকুর, শকুন ইত্যাদি। এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর আগামী বছরের ২৫ মার্চ তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে স্থাপিত হবে এ ‘ভাস্কর্যপল্লী’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। পুরাতন বিমানবন্দরে মাসব্যাপী চলবে এ পল্লীটির প্রদর্শনী। সর্বসাধারণের জন্য এটি উম্মুক্ত থাকবে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের বাসভবনের আঙিনায় চলছে এ ভাস্কর্যপল্লী নির্মাণের কাজ। এ কাজে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১৬ জন শিক্ষার্থী মিণ্টু দের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ৭১ জন শিল্পীকেই তিনি এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখবেন বলে জানিয়েছেন। ১ হাজার ৭১টি প্রতীকী লাশের ভাস্কর্যের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ৮০০ লাশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এগুলো পাথরে করার চিন্তা থাকলেও শুধু সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের সুবিধার্থে পাথরের পরিবর্তে তিনি ককশিট বা শোলা ব্যবহার করছেন। প্রয়োজনে ককশিটের ওপর কাপড় মুড়ে দেওয়া হবে বলে জানান নতুন  প্রজম্নোর  এই শিল্পী। বলা যায়, শিল্পের মধ্য দিয়েই শিল্পী মিণ্টু দে প্রজম্ন থেকে প্রজম্নোর কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ-দেশীয় দোসর আলবদর-রাজাকারদের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন। স্বাধীনতার ৪৪ বছরে এটাই সবচেয়ে বড় কাজ বলে জানান শিল্পী। দেশপ্রেম ও দেশাÍবোধের তাড়না থেকে ২০০৭ সালে এ কাজের প্রাথমিক চিন্তাভাবনা করেন তিনি। তবে অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে ২০১৪ সালে এ কাজে হাত দেন। বর্বরতার করুণ ইতিহাসের এ ভাস্কর্যপল্লীটির নির্মাণকাজ শেষ করতে প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকা খরচ হবে। তিনি আরও জানান, বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করেছেন। সরকারের অর্থায়ন ছাড়া বড় বাজেটের এমন একটি মহৎ কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। যেখানে সরকার একটি ভাস্কর্য কিনতেই ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা খরচ করে, সেখানে ১ হাজার ৭১টি ভাস্কর্য দিয়ে এমন একটি পল্লী নির্মাণ করতে সরকার এগিয়ে আসবে বলেও তিনি আশা করছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বর্তমান সরকার যদি এগিয়ে না আসে তাহলে ’৭১-এর বর্বরতার ভাস্কর্যপল্লীর নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক যদি তাকে এ ভাস্কর্যপল্লীটি নির্মাণে জায়গা না দিতেন তাহলে এমন একটি বড় ও মহৎ কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, ‘এ কাজের জন্য ভিসি তার বাসভবনের ভিতরে জায়গা দিয়েছেন। ফলে কাজটি করতে আমি অনেক বেশি উজ্জীবিত। এ ভাস্কর্যপল্লীটি প্রথমে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে প্রদর্শিত হলেও পরে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় প্রদর্শন হবে।’ মিণ্টু দে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বর্বরতা ও নৃশংসতার ভয়ানক চিত্র তুলে ধরে নতুন প্রজম্নোর মাঝে ’৭১-এর ফিলিংস ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই আমি কাজ করছি। শিল্পের এ কাজটি দেখে নতুন প্রজম্ন জানবে ’৭১ সালে কোনো ‘গণ্ডগোল’ হয়নি, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।” তিনি বলেন, ‘শুধু অর্থায়নের অভাবে যেন এ কাজটি থেমে না যায় সে জন্য মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি সব সময়।’

 

সর্বশেষ খবর