মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভোট প্রস্তুতিতে ২৪২ পৌরসভা আগামী সপ্তাহে তফসিল

গোলাম রাব্বানী

ভোট প্রস্তুতিতে ২৪২ পৌরসভা আগামী সপ্তাহে তফসিল

পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রগুলোকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেওয়া হয়েছে। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সারা দেশের মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, কাল-পরশুর মধ্যে পৌরসভার বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষ হতে পারে। এ ছাড়া ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ২৪২ পৌরসভার ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলেই আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা দিতে পারে ইসি।

এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধির সংশোধনী সহসাই ভেটিং হয়ে আসবে। গেজেট আকারে জারির পর ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট আয়োজনে যত দ্রুত সম্ভব সংশোধিত বিধিমালা জারির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার আগে মনোনয়নপত্র ছাপানো,  ভোটার তালিকার সিডি ও সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত রাখতে হবে। গতকাল নির্বাচন উপযোগী পৌরসভাগুলোর ভোটার তালিকা প্রস্তুতে জেলা, উপজেলা, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও এনআইডি মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন ইসি। চিঠিতে বলা হয়, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে পৌরসভাগুলোর ছবিসহ ভোটার তালিকা ও সিডি প্রস্তুত করে মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করতে হবে এনআইডি উইংকে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ কর্মকর্তারা এ তালিকা যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন হলে চূড়ান্ত সিডি সংগ্রহ করবে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাইয়ের পর ভোটার তালিকা সিডি-ফটোকপি করে রাখার কথাও নির্দেশনায় বলেছে ইসি। বিদ্যমান তালিকাভুক্ত ভোটাররাই এবার পৌরসভায় ভোট দিতে পারবেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যারা তালিকাভুক্ত হতে নিবন্ধিত হয়েছে তারা ভোট দিতে পারবে না।

ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মেরামতে চিঠি : নির্বাচন উপযোগী ২৪২ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।  ইসির এক সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ২৪২টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত নির্বাচন উপলক্ষে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছোটখাটো মেরামত করার প্রয়োজন হলে তা দ্রুত নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী করতে বলা হয়।

ভোটকেন্দ্রে খসড়া তালিকাও শিগগির : ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করে গেজেট করার বিধান রয়েছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালার আলোকে দ্রুত সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা করতে মাঠ কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হবে। নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালা জারির পর এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হবে। সময় কম থাকলে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র তালিকা পাঠানোর নির্দেশনাও দেওয়া হতে পারে বলে একাধিক ইসি জানান। সে ক্ষেত্রে মাঠ কর্মকর্তাদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

অন্যদিকে সারা দেশে ইসির পাঠানো চিঠি অনুযায়ী যে ২৪২টি পৌরসভার ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে নিম্নে তার তালিকা দেওয়া হলো। তবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ তালিকা কিছুটা পরিবর্তনও হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসি।

যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে-

রংপুর বিভাগ : পঞ্চগড়ের পঞ্চগড়। কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম, নাগেশ্বরী ও উলিপুর। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও ঠাকুরগাঁও। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, দিনাজপুর, বীরগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর। নীলফামারীর সৈয়দপুর ও জলঢাকা। রংপুরের বদরগঞ্জ। লালমনিরহাটের লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম পৌরসভা।

রাজশাহী বিভাগ : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, কালাই ও জয়পুরহাট। বগুড়ার শেরপুর, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, সান্তাহার, কাহালু, ধুনট, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ ও বগুড়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ ও নাচোল। নওগাঁর নওগাঁ ও নজিপুর। রাজশাহীর কাকনহাট, আড়ানী, মুণ্ডুমালা, কেশরহাট, গোদাগাড়ী, তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ, তানোর, কাটাখালী, চারঘাট, দুর্গাপুর, নওহাটা ও পুঠিয়া। নাটোরের নলডাঙ্গা, গোপালপুর, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও নাটোর। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, বেলকুচি ও কাজীপুর। পাবনার চাটমোহর, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, পাবনা ও ঈশ্বরদী পৌরসভা।

খুলনা বিভাগ : মেহেরপুরের গাংনী ও মেহেরপুর। কুষ্টিয়ার মিরপুর, ভেড়ামারা, কুমারখালী, খোকসা ও কুষ্টিয়া। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, জীবননগর, আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুণ্ড ও শৈলকুপা। যশোরের নওয়াপাড়া, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া, চৌগাছা, কেশবপুর ও যশোর। মাগুরার মাগুরা। নড়াইলের কালিয়া ও নড়াইল। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, মোংলাপোর্ট ও বাগেরহাট। খুলনার চালনা ও পাইকগাছা। সাতক্ষীরার কলারোয়া ও সাতক্ষীরা পৌরসভা।

বরিশাল বিভাগ : বরগুনার বেতাগী, পাথরঘাটা ও বরগুনা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও কুয়াকাটা। ভোলার বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান ও ভোলা। বরিশালের মুলাদী, গৌরনদী, মেহেন্দিগঞ্জ, বানারিপাড়া, বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুর। ঝালকাঠির নলছিটি। পিরোজপুরের পিরোজপুর ও স্বরূপকাঠি পৌরসভা।

ঢাকা বিভাগ : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, মধুপুর, টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, ভূঞাপুর, সখিপুর, গোপালপুর ও কালিহাতী। জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, জামালপুর, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ। শেরপুরের নকলা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর ও শ্রীবরদী। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ত্রিশাল, ভালুকা, গফরগাঁও, নান্দাইল, ফুলপুর ও ফুলবাড়িয়া। নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা, দুর্গাপুর ও কেন্দুয়া। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ, হোসেনপুর, কটিয়াদি, বাজিতপুর, ভৈরব ও করিমগঞ্জ। মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও মানিকগঞ্জ। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম ও মুন্সীগঞ্জ। ঢাকা জেলার ধামরাই ও সাভার পৌরসভা। গাজীপুরের শ্রীপুর। নরসিংদীর মাধবদী, মনোহরদী ও নরসিংদী। নারায়ণগঞ্জের তারাব ও সোনারগাঁও। রাজবাড়ীর পাংশা, রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ। ফরিদপুরের বোয়ালমারী, নগরকান্দা ও ফরিদপুর। গোপালগঞ্জের গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গীপাড়া। মাদারীপুরের কালকিনি, শিবচর ও মাদারীপুর। শরীয়তপুরের নড়িয়া, ডামুড্যা, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও শরীয়তপুর পৌরসভা।

সিলেট বিভাগ : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, কুলাউড়া ও বড়লেখা, সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ছাতক, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ ও দিরাই এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা।

চট্টগ্রাম বিভাগ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার চান্দিনা, লাকসাম, দাউদকান্দি, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম ও হোমনা; চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ছেংগারচর, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি, কচুয়া ও মতলব; ফেনীর দাগন ভূঁঞা, ফেনী ও পরশুরাম; নোয়াখালীর বসুরহাট, চৌমুহনী, হাতিয়া ও চাটখিল, লক্ষীপুরের রামগঞ্জ, রামগতি ও রায়পুর; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, মীরসরাই, পটিয়া, রাউজান, বারইয়ারহাট, রাঙ্গুনিয়া ও সীতাকুণ্ড; খাগড়াছড়ির খাগড়াছড়ি ও মাটিরাঙ্গা, রাঙামাটির রাঙামাটি, বান্দরবানের লামা ও বান্দরবান পৌরসভা। প্রসঙ্গত, ইসিতে পাঠানো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৩২৪টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ২৪২টি পৌরসভা নির্বাচন উপযোগী রয়েছে। এসব পৌরসভায় ভোটার রয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ। সর্বশেষ ২০১১ সালে ৩১৯টি পৌরসভার মধ্যে ২৮৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ১২ জানুয়ারি ৭৭টি, ১৩ জানুয়ারি ৪৭টি, ১৭ জানুয়ারি ৪ টি এবং ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে হয়। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর