নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে করা রিভিশন মামলাটিও খারিজ করে দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। গতকাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে করা রিভিশন মামলাটি খারিজ করে দেন। এর আগে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ডিবি পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বিউটি নারাজি আবেদন জমা দেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দাখিলকৃত নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন। পরে বিউটি ইসলাম নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত নারাজি রিভিশন মামলাটি খারিজ করে দেওয়ায় মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি উচ্চ আদালতে যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিক ইমামের আদালতে মামলার ধার্য তারিখ থাকায় সাত খুন মামলার ২২ আসামিকে হাজির করা হয়। আদালতে লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ র্যাব-১১-এর সাবেক ৯ সদস্যের জন্য জামিন প্রার্থনা করা হয়। ঢাকা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সারোয়ার মিয়ার নেতৃত্বে ১৫-২০ জন আইনজীবী সাবেক র্যাব সদস্যদের জন্য জামিনের প্রার্থনা করে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাত খুন মামলায় করা পৃথক দুটি মামলার একটির বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল। অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে তার কোনো আপত্তি না থাকায় মামলাটি গতকাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩০ নভেম্বর। নারায়ণগঞ্জ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি ফজলুর রহমান ও বাদীপক্ষের আইনজীবী জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত নারাজি খারিজের বিরুদ্ধে করা রিভিশন মামলাটি খারিজের আদেশ দেন। মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করব। আমাদের আশা, উচ্চ আদালত আমাদের আর্জি গ্রহণ করবেন।’ বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘বাদীর ইচ্ছায় আমরা উচ্চ আদালতে এ ব্যাপারে আপিল করব।’ নারায়ণগঞ্জ কোর্টপুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, নির্ধারিত তারিখ থাকায় গতকাল সকালে সাত খুন মামলার চার্জশিটভুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেফতার ২২ জনকে কঠোর প্রহরায় নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নাসিকের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। ৩০ এপ্রিল বিকালে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে সকালে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আলোচিত সাত খুনের এ ঘটনায় নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি একটি এবং নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করেন। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর চলতি বছর ৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত সংস্থা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুটি মামলায় আদালতে অভিন্ন চার্জশিট জমা দেয়। চার্জশিটে নূর হোসেন, র্যাব কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ২২ জন গ্রেফতার রয়েছেন। আর ১৩ জন পলাতক।